ইউক্রেনীয় কমান্ডের শীর্ষস্তরে মতপার্থক্য বাড়ছে

যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি যত প্রতিকূল হচ্ছে, ইউক্রেনীয় কমান্ডের শীর্ষস্তরে মতপার্থক্য ততই বাড়ছে। যুদ্ধ পরিচালনার নানা বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মতে অনড় অবস্থান নিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

খারকিভ রণাঙ্গনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পেছনে জ্যাকেট পরিহিত ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি

ইউক্রেনীয় সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি গতকাল প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তিনি রুশ বাহিনীর হাতে ঘেরাও হওয়া থেকে বাঁচাতে সিভিয়ারোডোনেৎস্ক ও লিসিচানস্কে মোতায়েন পাঁচ হাজার সৈন্যকে সেখান থেকে সরিয়ে ক্রামাতোরস্ক-স্লাভিয়ানস্কে নেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে সম্মত করানোর চেষ্টা চালান।

জালুঝনি প্রেসিডেন্টকে জানান, সিভিয়ারোডোনেৎস্কে অবস্থানরত দলটি কার্যতঃ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে এবং সেখানে সরবরাহ পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে বড়জোর কয়েকদিন সময় পাওয়া যাবে। শত্রুপক্ষের শ্রেয়তর গোলাবারুদ ও বিমান বাহিনীর বিপরীতে দীর্ঘ ফ্রন্টে যুদ্ধ না চালিয়ে অবরোধ এড়ানো সম্ভব বলে তিনি একটি মানচিত্র মেলে ধরে দেখান।

জানা গেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও তার কার্যালয়ের রাজনৈতিক কর্মকর্তারা সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের এ যুক্তিতে কান দেননি। তারা সিভিয়ারোডোনেৎস্ককে রুশ আগ্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নতুন প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করছেন। সেনাপ্রধান যে বিষয়টিকে কৌশলগত পশ্চাদপসরণ বা ট্যাকটিক্যাল রিট্রিট বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেটাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন মনে করছেন।

এদিকে সিভিয়ারোডোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর ১০ হাজারের মতো সৈন্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়া-সমর্থিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (এলপিআর) প্রধান লিওনিদ পাশেচনিক। বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সিভিয়ারোডোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক সম্পূর্ণ মুক্ত করা এ মুহূর্তে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।

রুশ বাহিনীর সঙ্গে থাকা সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, সিভিয়ারোডোনেৎস্ক জেলার মধ্যাঞ্চল ও শিল্প এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর কিছু অংশ অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া শহরের প্রান্তসীমায় আবাসিক এলাকায় ইউক্রেনের কিছু সৈন্য অবস্থান করছে।

গত ২৪ ঘন্টায় যুদ্ধের খবরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, উপর্যুপরি দ্বিতীয় দিনের মতো দোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ভারী গোলাবর্ষণ। দোনেৎস্কের ২২ ও ৫ নম্বর স্কুলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হাউয়িটজার এম-৭৭৭ কামান থেকে ১৫৫ মিমি ক্যালিবারের গোলাবর্ষণ করা হয়েছে বলে ডিপিআর কর্মকর্তারা জানান। এ সব হামলায় ৬ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয় বলে ডিপিআরের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

খারকিভে রুশ অবস্থানে উপর্যুপরি গোলাবর্ষণের পর ইউক্রেনীয় বাহিনী পেছনে সরে গিয়ে যেবেরস্কি দোনেৎস নদীর অন্য পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আরও শক্তি সঞ্চয়ের পর তারা আবার হামলা চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইজিয়ুম সেক্টরে রুশ বাহিনী স্লাভিয়ানস্কের পথে অগ্রসর হতে গিয়ে সভিয়াতগোরস্কে ইউক্রেনীয়দের প্রচণ্ড বাধায় পিছু হটেছে। রুশ বাহিনীর একটি লিমান হয়ে স্লাভিয়ানস্কের দিকে যাবার চেষ্টা করছে। আরেকটি অংশ দিবরভা ও স্টারি কারাভান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখান থেকে রায়গরোদকের দিকে যেতে গিয়ে নদীতে সেতু না থাকায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।

লুগানস্ক ফ্রন্টে রুশ বাহিনী কামিয়াশেভাখা থেকে ভ্রুবভকা শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবস্থানে গোলাবর্ষণ করছে। ভ্রুবভকা থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা পিছু হটলে যোলট শহরে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় বাহিনীর অংশটি তিন দিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। ভ্রুবভকার উপর চাপ সৃষ্টির পেছনে রুশদের সেটাই উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলে খেরসন ও নিকোলায়েভ সীমান্তে তৃতীয় দিনের মতো রুশ অবস্থান ভাঙার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। স্নেগ্রিভকা এলাকায় ইউক্রেনের একটি ব্যাটালিয়ন ট্যাকটিক্যাল গ্রুপ ভারী গোলাবর্ষণের সাহায্যে এগোনোর চেষ্টা করছে বলে রুশ সেনা কর্মকর্তাদের বরাতে সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের হামলার আশঙ্কায় সীমান্তের কিছু এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করেছে রাশিয়া। কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগের দিন ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ভিআরজি সদস্যদের সংঘর্ষে কয়েকজন হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।