ওসি পরিচয়ে জালিয়াতি, হাতিয়ে নিলেন ২ কোটি টাকা!

বগুড়ার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেছেন হেলাল উদ্দিন। নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার অবসরপ্রাপ্ত ওসি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। কোথাও আবার নিজেকে থানার এসআই হিসেবে পরিচয় দিতেন। এভাবে কথার জালে ফাঁসিয়ে, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন হেলাল।

প্রতারকদের আটকের পর র‌্যাবের মিডিয়া ব্রিফ

এই প্রতারণার জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল এক জালিয়াত চক্র। ইতোমধ্যে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াত চক্রের মূলহোতা হেলালসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ ভুয়া নিয়োগপত্র, জাল অফিস আদেশ ও সিল।

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। হেলালের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু, মো. খন্দকার মারুফ এবং মো. আব্দুল কাদের ওরফে রাজু। অভিযানে বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি সিলমোহর, ১১ পাতা ভুয়া নিয়োগপত্র, নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র ৩ পাতা, মোবাইল ফোন ৮টি এবং নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, মো. মফিজুল ইসলাম লেবু এবং মো. আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের হেলাল উদ্দিনের কাছে নিয়ে আসতো।

মূলহোতা হেলাল উদ্দিন বস সেজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভুক্তভোগীদের ইন্টারভিউ নিতেন। পরবর্তীতে উবারের একটি গাড়ি ভাড়া করে নিজের গাড়ি বলে দাবি করতেন হেলাল। তারপর সরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অফিসের ভিতরে প্রবেশ ও বের হয়ে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতেন।

অতঃপর বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিলমোহর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভুয়া স্বাক্ষর সম্বলিত বিভিন্ন অফিস আদেশ এবং ভুয়া নিয়োগপত্র খামে বন্দি করে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন। ভুক্তভোগীদের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য চাকরির মেডিকেলের নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যেতেন।

চক্রটি প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিত, চাকরি হওয়ার পর টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করত। এছাড়া ভুয়া নিয়োগের পূর্বের রাতে তারা বলত, আরো টাকা দিতে হবে, নইলে আগামীকাল চাকরি কনফার্ম করা যাবে না। এতে ভুক্তভোগীরা তাদের চাহিদামতো অগ্রীম টাকা প্রদান করতে বাধ্য থাকতেন।

র‍্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, গত ৫ বছর ধরে চক্রটি ৫০ জন চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।