সাড়ে তিন হাজারের পুরোনো শহর, প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিস্ময়

ইরাকে জলাধারের তলা থেকে ভেসে উঠেছে তিন হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ। দেশটির অধিকাংশ এলাকাই খরাপীড়িত। এ পরিস্থিতিতে পানি খোঁজার চেষ্টাও প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। আর এ খরার সময়টি কাজে লাগিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। খুঁড়তে খুঁড়তেই ইরাকের বৃহত্তম মসুল বাঁধের পেছনে থাকা দিনকে দিনে সঙ্কুচিত হতে থাকা জলাধারে বহুপ্রাচীন শহরের সন্ধান পেয়েছেন। ডেইলি মেইল।

সাড়ে তিন হাজারের পুরোনো শহর

দেশটির কুর্দিস্তান অঞ্চলের টাইগ্রিস নদীর কাছাকাছি জাখিকু শহর পানির তলায় হারিয়ে গিয়েছিল। গবেষকদের একটি দল বিশ্বাস করেন, এটি মিতানি রাজ্যের একটি শহরের অবশিষ্টাংশ। যে শহরটি ব্রোঞ্জ যুগে কয়েকশ বছর বর্তমানের উত্তর ইরাক এবং সিরিয়া শাসন করেছিল।

ধারণা করা হয় শহরটি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মাটিতে ঢেকে থাকার দরুন শহরটি পানিতে দ্রবীভূত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। একটি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

সাড়ে তিন হাজারের পুরোনো শহর

ক্রমবর্ধমান খরার প্রভাবে জলাধারটি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি হারাতে হারাতে যেন তার ‘পেটের ভেতর থেকে’ বের করে দিল বিশাল ওই প্রাচীন শহর। ভেসে উঠে মিতানি সাম্রাজ্যের প্রাচীন নগরভবন, বিশাল দুর্গ স্টোরেজ ভবন, শিল্প কমপ্লেক্স ইত্যাদি।

১৫৫০ থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের এই প্রাচীর শহর উদ্ধারের চেষ্টা ২০১৮ সালেও করা হয়েছিল। তখন জার্মান ও কুর্দি প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রচেষ্টা সফল হতে গিয়েও হয়নি। কিছু অংশ ভেসে উঠলেও আবার পানিতে তলিয়ে যায়। প্রাচীন শহরটির পুনরুদ্ধার কাজ সেখানেই থেমে থাকে।

সাড়ে তিন হাজারের পুরোনো শহর

খনন কাজের নেতৃত্বে ছিলেন কুর্দিস্তান প্রত্নতত্ত্ব সংস্থার চেয়ারম্যান ড. হাসান আহমেদ কাসিম, ফ্র্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইভানা পুলজিজ এবং ইউনিভার্সিটি অব টুবিনজেনের ডক্টর পিটার ফাল্জনার। উদ্ধারকৃত দুর্গের দেয়ালটি পানির নিচে থাকা সত্ত্বেও অক্ষত ছিল বলে জানান তারা।

ডক্টর পুলজিজ বলেন, বিশাল ম্যাগাজিন বিল্ডিংটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পণ্য সঞ্চয় করা হয়েছে- সম্ভবত সমগ্র অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল।

সাড়ে তিন হাজারের পুরোনো শহর

হাসান কাসিম বলেন, স্থানটি মিতানি সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। খনন কাজে আরও আবিষ্কৃত হয়েছে পাঁচটি সিরামিক জার, শতাধিক কিউনিফর্ম ট্যাবলেট। একটি মাটির খাম থেকে উদ্ধার করা ট্যাবলেটগুলো সেই সময়ের অক্ষর বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুবাদের চেষ্টাও চলছে।

ইরাক বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে গত শতাব্দীতে গড় তাপমাত্রা কমপক্ষে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু-সম্পর্কিত পানি সমস্যার কারণে এই অঞ্চলটি ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির ১৪ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।