পতনের দ্বারপ্রান্তে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট!

দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের আইনি সুরক্ষা বিল (সেটলার আইন) সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে হেরে পতনের দ্বারপ্রান্তে আছে নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট সরকার। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য বেসামরিক আইনি অধিকার নবায়ন বিলের প্রথম পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। জোটের এই পরাজয়কে ইসরায়েলি মিডিয়া ‌‘ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে পরাবাস্তব’ এবং ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। দ্য গার্ডিয়ান।

পতনের দ্বারপ্রান্তে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট!

চূড়ান্তভাবে আইনটি পাস করতে ব্যর্থ হলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করা জোটের পতন ঘটে যেতে পারে। ডানপন্থী বিরোধী সদস্যরা বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, যদিও তারা বসতি নির্মাণকে সমর্থন করে। ভোটাভুটিতে ক্ষমতাসীন জোট ৫৮-৫২ ব্যবধানে হেরেছে।

ইসরায়েলের আইনসভা নেসেটের নতুন সদস্য নামা লাজিমি এ বিষয়ে বলেন, এই ভোট প্রমাণ করে, নতুন সরকার কতটা ভঙ্গুর। তবে দ্বিরাষ্ট্র নীতির সমর্থকরা বলছেন, তারা বিপক্ষে ভোট দিতে পারতেন। কিন্তু এই সরকারকে সমর্থন না করা হবে বিশেষ সুবিধাভোগী চরিত্র। এই সরকার অতি ডানপন্থী ও নব্য উদারপন্থীদের পছন্দ। সুতরাং সফলতা অর্জনের জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে।

১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীর দখল করার পর থেকে ইসরায়েলে একটি জরুরি প্রবিধান চালু হয়। ইসরায়েলি আনসভা নেসেট প্রতি পাঁচ বছরে একবার ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নিয়ে করা আইন নবায়ন করে থাকে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পশ্চিম তীরে প্রায় ৫ লাখ ইহুদি বাস করে। তাদের ইসরায়েলি নাগরিকত্ব রয়েছে। একই এলাকায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সামরিক আইনের অধীনে বসবাস করে আসছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে আসছে।

যদি আইনটি নবায়ন না করা হয় কিংবা জুনের শেষের মধ্যে একটি পরিবর্তিত সংস্করণ পাস করা না হয়, তাহলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামরিক শাসন দ্বারা শাসিত হবে। এর ফলে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাক্স এবং পুলিশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা ফুঁসে উঠতে পারে। যা ইসরায়েল সরকারের পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বর্তমান ইসরায়েলি ক্ষমতাসীন জোট সরকার আটটি দলের সমন্বয়ে গঠিত। এক বছর আগে নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল। জোটে বসতি স্থাপনের বিরোধিতাকারী বামপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর দক্ষিণপন্থীদের নেতা প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট, যিনি এর আগে একটি বসতিস্থাপনকারী লবিং গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার বিরোধী আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ তায়াল পার্টির নেতা আহমদ তিবি বলেছেন, ক্ষমতাসীন এই জোটে যোগদান একটি বড় ভুল ছিল। এটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সবাই তাদের বিবেকের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। আমরা নেসেটের একমাত্র দল যারা এই বিলের বিপক্ষে। আমরা যা বিশ্বাস করি তার পক্ষেই ভোট দেই।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড টুইটারে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা প্রথম রাউন্ডে হারলেও বরাবরের মতো শক্তিশালী হয়ে ফিরব এবং পরের রাউন্ডে জিতব। জোটের অংশ জাতীয়তাবাদী দল নিউ হোপ সেটলার আইন পাস করতে না পারলে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। আর যদি নিউ হোপ চলে যায়, তাহলে আবার নেতানিয়াহুর ফেরার পথ উন্মুক্ত হতে পারে।