যেসব পণ্য ও সেবার দাম কমতে পারে

নতুন অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্যের সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি ও হ্রাসের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এতে করে পণ্যগুলোর আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় কমবে, যার প্রভাব পড়বে এসব পণ্যের দামে। নতুন অর্থবছরে যেসব পণ্য ও সেবার দাম কমতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-

যেসব পণ্য ও সেবার দাম কমতে পারে

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস: মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চার্জকে উৎসে আয়করের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে করে বিকাশ, রকেট, নগদ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্যয় কমতে পারে।

ঢেউটিন ও ইস্পাতজাত পণ্য: গ্যালভানাইজড আয়রন শীট বা ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল ও জিঙ্ক অ্যালয় জাতীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে করহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে বাজারে ঢেউটিন ও সমজাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।

স্বর্ণ/ অলঙ্কার: নতুন বাজেটে স্বর্ণ আমদানিতে বিদ্যমান অগ্রিম কর বিলোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে স্বর্ণের আমদানি ব্যয় ও বাজার দর কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এয়ার ফিল্টার, ওয়াটার ফিল্টার: পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি বহাল রাখার পাশাপাশি উপরকণ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এয়ার ফিল্টার, ওয়াটার ফিল্টার ইত্যাদি প্রস্তুতের ব্যয় কমবে এবং পণ্যগুলোর বাজার মূল্য কমারও সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশে তৈরি গাড়ি ও মোটরসাইকেল: স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর এবং উপরকণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে সমুদয় মূসক (আগাম করসহ) ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে, ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটর কার ও ভেহিকল উৎপাদনের পর্যায়ভেদে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক এবং উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে মূসক (আগাম করসহ) ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল ও গাড়ির দাম কমবে।

ব্যাটারি: মেইনটেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাজারে ব্যাটারির দাম কমতে পারে।

ইস্পাত সামগ্রী: মাইল্ড স্টিল প্রোডাক্টের ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট টন প্রতি ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে ডেকোরেশন, ফেন্সিংয়ে ব্যবহৃত বিম, বার, পেরেক ইত্যাদির দাম কমতে পারে।

পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ব্যাগ: পলিইথিলিনের তৈরি পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়ক সামগ্রীর উপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাজারে পণ্যগুলোর দাম কমবে।

দেশে তৈরি হ্যান্ড টাওয়েল, পেপার টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেড শিট: হ্যান্ড টাওয়েল, পেপার টাওয়েল ও ক্লিনিক্যাল বেড শিটের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হাম ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে করে বাজারে পণ্যগুলোর দাম কমবে।

হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার: এসি ও নন-এসি হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের উপর মূসক হার যথাক্রমে ১০ ও ৫ শতাংশের পরিবর্তে উভয় ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে করে তিন-তারকা ও তদূর্ধ্ব মানের নয় এবং বার নেই এমন রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচ কিছুটা কমবে।

খামারজাত হাঁস-মুরগী ও গরুর মাংস: হাঁস-মুরগীর খামারের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি পশু খাদ্য আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পোল্ট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। কাস্টমস এসআরও নং ১২৮ (৩ জুন, ২০২০) এ বর্ণিত পোল্ট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড পণ্যগুলোর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পোল্ট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত হোয়াইট গ্লুটেনের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে গো-খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত সুগারকেইন মোলাসেস আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে করে পোল্ট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের দাম কমবে। পুরো বিষয়টির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে খামারজাত হাঁস-মুরগী ও গরুর দামে।

কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক: কৃষি কাজে ব্যবহার্য কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক তৈরিতে ব্যবহৃত ক্যাস্টর অয়েল পলিগ্লাইকল, সলভেসো, জেনাপল, প্রপোকোনাজল, ডোডিকিলিবজলস এসিড ও ব্রাঞ্চড সিএ-এস সল্যুশন আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাজারে কীটনাশক, বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশকের দাম কমবে।

মুড়ি ও চিনি: মুড়ি ও চিনির ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাজারে পণ্য দুটির দাম কিছুটা কমবে।

কনক্রিট ব্লক: কনক্রিট ব্লক এর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারে কনক্রিট ব্লকের দামে এর প্রতিফলন ঘটবে।

দেশীয় মোবাইল ব্যাটারি, চার্জার ও ডিসপ্লে: মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, চার্জার ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাজারে স্থানীয় ব্যাটারি, চার্জার ও ডিসপ্লের দাম কমবে।

পাওয়ার টিলার ও থ্রেশার মেশিন: পাওয়ার টিলারের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারে পাওয়ার টিলারের দামে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে। একইভাবে খরচ কমবে থ্রেশার মেশিনের। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার থ্রেশার ও অন্যান্য থ্রেশিং মেশিনের জন্য রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে।

ফাউন্ড্রি পণ্য: ফাউন্ড্রি শিল্পে স্থানীয়ভাবে স্ক্র্যাপ, ভাঙ্গারি সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে নলকূপ, বার্নারসহ বিভিন্ন ধরণের স্থানীয়ভাবে তৈরি ছাঁচে ঢালা পণ্যের দাম কমবে।

ব্রেইল বই ও হিয়ারিং এইড: দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মানুষের কল্যাণার্থে ব্রেইল মুদ্রণের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে শ্রবণ প্রতিবন্ধিদের জন্য কানে শোনার যন্ত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারির ওপর প্রয়োজ্য শুল্ককর বিলোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

হুইল চেয়ার: শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত হুইল চেয়ার আমদানিতে সব ধরণের শুল্ককর বিলোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কাজুবাদাম: খোলসওয়ালা ও খোলসবিহীন কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ককর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারে কাজুবাদামের দামে এর প্রতিফলন ঘটবে।

দেশে তৈরি স্টেইনলেস স্টিলের পণ্য: হট-রোলড স্টেইনলেস স্টিল শিট আমদানির শুল্ক বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে করে দেশে তৈরি স্টেইনলেস স্টিল পণ্যগুলোর দাম কমবে।