২০ বছর মেয়াদি সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি করল ইরান-ভেনিজুয়েলা

ইরান ও ভেনিজুয়েলা নিজেদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘কৌশলগত পর্যায়ে’ উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় হিমশিম খাওয়া তেল-সমৃদ্ধ দুটি দেশ ২০ বছর মেয়াদি একটি ‘সহযোগিতা রোড ম্যাপ’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ইরান সফর উপলক্ষে তেহরানে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

২০ বছর মেয়াদি সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি করল ইরান-ভেনিজুয়েলা

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দুই দিনের সফরে শুক্রবার সকালে ইরানে পৌঁছেন। ভেনিজুয়েলার একটি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সফরে এসেছেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে ভেনিজুয়েলার নেতা তেহরানের সাদাবাদ প্রাসাদে ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।

বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা ইরান-ভেনিজুয়েলা সম্পর্ককে ‘কৌশলগত পর্যায়ে’ উন্নীতকরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে তারা জ্বালানি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কুষি, পর্যটন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেন।

তেহরানে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ইরান ও ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি ২০ বছর মেয়াদি সহযোগিতা রোড ম্যাপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

কর্মকর্তারা জানান, ইরান ও ভেনিজুয়েলার দুই নেতা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা দুই দেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর আলোকপাত করেন। দুই দেশের কর্মকর্তারা ভবিষ্যত সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় ও ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে পাশে বসিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট রইসি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র নীতিতে বরাবরই স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ায় জোর দেওয়া হয়েছে। ভেনিজুয়েলা এটা প্রমাণ করেছে যে শত্রুপক্ষ ও সাম্রাজ্যবাদের হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার মুখে অনড় থাকার দুর্দান্ত প্রতিরোধ-সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

তিনি বলেন, ভেনিজুয়েলার মতো ইরানও দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যদের নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলা করেছে এবং বিষয়টিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেছে।

নিকোলাস মাদুরো তার বক্তব্যে ২০১৭ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভেনিজুয়েলার প্রতিরোধের প্রশংসা করে বলেন, এক্ষেত্রে ইরানের অভিজ্ঞতা থেকে ভেনিজুয়েলা শিখতে চায়। আমরা দুই দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করতে চাই।

ঐতিহাসিকভাবে খরাপ্রবণ জায়গাগুলোতে কৃষি উন্নয়নে ইরান যে ‘বিস্ময়’ দেখিয়েছে তার প্রশংসা করে মাদুরো বলেন, আমরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মতো কৃষিক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করতে চাই।

আগামী শনিবার থেকে তেহরান ও কারাকাসের মধ্যে নিয়মিত সরাসরি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়ে নিকোলাস মাদুরো বলেন, আমরা আশা করি ইরানের আরও বেশি বেশি মানুষ ভেনিজুয়েলার ঐতিহাসিক স্থান ও ল্যান্ডমার্কগুলোকে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করবেন।

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি বিশ্বাস করি সাম্য, ন্যায়বিচার ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোতেই পৃথিবীর ভবিষ্যত নিহিত। এ ভবিষ্যত আমাদেরকে একসঙ্গে মিলে গড়তে হবে।

নিকোলাস মাদুরো তার দেশের জ্বালানি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ইরানের সহযোগিতার প্রশংসা করেন।