ইন্দোনেশিয়ায় বিস্ময়কর ঔষধি গাছের গ্রাম
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত জাম্বি প্রদেশের একটি সুপ্রসিদ্ধ গ্রাম। কুলু কুলু বয়ে চলেছে একটি নদী। নাম বাতাং হারি। তারই গা ঘেঁষে সটান দাঁড়িয়ে আছে মুয়ারা জাম্বি। এখানকার অধিকাংশ মানুষেরই ধ্যান-জ্ঞান-জীবিকা ঔষধি গাছকে ঘিরে। নতুন নতুন ঔষধি সংগ্রহ করে চাষ এবং সংরক্ষণ করে তা বাণিজ্যিকরণ এ গ্রামের মানুষের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। স্থানীয় একজন বদ্যির মতে, জ্বর থেকে শুরু করে পেট ব্যথা, হাড় ফাটা এমনকি ক্যান্সার নিরাময়েরও ঔষধি গাছ রয়েছে গ্রামটিতে। ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডিডেটইলস, আল জাজিরা।
ইন্দোনেশিয়ার প্রথাগত ঔষধি চিকিৎসকদের স্থানীয় ভাষায় দুকুন নামে সম্বোধন করা হয়। এমনই একজন সিতি হাওয়া (৬২)। ঘাসের মতো পাতা ছড়ানো একটি গাছ দেখিয়ে জানালেন, কাশি কমাতে এ গাছের ফুল সিদ্ধ করে খাওয়ানো যেতে পারে। সিতির এলাকায় ২০ ধরনেরও বেশি ঔষধি গাছের চাষ হয়- যেগুলোর মধ্যে পেট ফোলা, ম্যালেরিয়াসহ অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা করার গাছও রয়েছে।
ব্রিচ বেবি (মায়ের পেট থেকে উল্টোভাবে প্রসব হওয়া) হয়ে জন্মেছিলেন সিতি। তিনি আল জাজিরাকে হাসতে হাসতে বললেন, একজন ব্রিচ বেবিকে তো অবশ্যই দুকুন হতে হয়। আপনি দেখুন (গাছগুলো দেখিয়ে) আমার বাড়ির উঠোনে কত্তো ওষুধ।
সিতি একা নন। ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের মুয়ারা জাম্বির এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। স্থানীয় ঔষধি উদ্ভিদ সংরক্ষণ গোষ্ঠী মেনাপো হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা মুখতার হাদি বলেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আপনি ঔষধি গাছ পাবেন। পৃথিবীর আনুমানিক ১০ শতাংশ বিরল প্রজাতির ফুলেল উদ্ভিদ ইন্দোনেশিয়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না।
কিন্তু দেশটির লাগামহীন মানব উন্নয়ন সেই প্রকৃতির দানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সুমাত্রা দ্বীপজুড়ে এখন পাম বাগান আর কয়লাখনির সম্প্রসারণের মতো ‘দুষ্কর্ম’ চলছে। নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে রেইনফরেস্টের জীববৈচিত্র্যকে।
ঔষধি গাছের চাষ ছাড়াও মুয়ারা জাম্বি গ্রামটির আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে রয়েছে কয়েক ডজন প্রাচীন মন্দির। কেউ কেউ বলছেন এলাকাটি একসময় বৌদ্ধধর্মের জন্য একটি ‘সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়’ ছিল। প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর কথায়ও সে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এপ্রিলে এই এলাকা পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, সপ্তম শতাব্দীতে এশিয়ার বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্র ছিল জাম্বি।
ওই অনুষ্ঠানে মন্দিরগুলো পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট উইদোদো। আর তখনই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিল ঔষধিপ্রেমীদের। না-জানি তাদের বাগানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি।
গেদং মন্দিরটি কাপুং (অরক্সিলাম ইন্ডিকাম) গাছ দিয়ে ভরপুর। এটি ভারতীয় ট্রাম্পেট গাছ নামেও পরিচিত। এর বীজ মৌসুমী ফ্লু’র চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। সুংকাই গাছ (পেরোনেমা ক্যানেসেনস) রয়েছে শত শত গুণ- যার পাতা খেলে জ্বর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কেউ কেউ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে সুংকাই পাতার দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে জানান সিতি।
মহামারি চলাকালীন, জাম্বি প্রদেশের অন্য একটি জেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আল হারিস, করোনাভাইরাস রোগীদের ঐতিহ্যবাহী সুংকাই ওষুধ বিতরণ করতে গিয়েছিলেন। জাম্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাদিয়াবতী লতিফও বলেছেন, সুংকাই পাতার মধ্যে কোভিড-১৯ এর নিরাময়কারী গুণ রয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.