ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে ইরানি হ্যাকাররা

সন্দেহভাজন ইরানি হ্যাকাররা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তার ইমেইল হ্যাক করেছে। এর মধ্যে একাধিক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্টের কপি হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। ইসরায়েলি সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজিস এ কথা জানিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

ইসরায়েলের সাবেক বিচার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি লিভনিকে টার্গেট করেছিল হ্যাকাররা

চেক পয়েন্ট এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আক্রমণকারীরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য চুরির জন্য ইমেইল ফিসিং ও সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো হ্যাকিং কৌশল অবলম্বন করেছে। যেসব কর্মকর্তাকে টার্গেট করা হয়েছে তাদের মধ্যে ইসরায়েলের সাবেক মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা ও মার্কিন কূটনীতিক রয়েছেন।

প্রতিবেদনে হ্যাকিংয়ের টার্গেট হিসেবে ইসরায়েলের সাবেক বিচার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি লিভনির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য কোনো টার্গেটের নাম উল্লেখ না করা হলেও যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে অন্তত একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও তেল আবিবে নিযুক্ত একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

এছাড়া ইসরায়েলের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং প্রতিরক্ষা খাতের একটি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্টকেও টার্গেট করা হয়েছে। গবেষণা সংস্থার প্রধান যিনি, তিনি একজন শিক্ষাবিদ এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক হিসেবে পরিচিত।

চেক পয়েন্টের থ্রেট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ ম্যানেজার সের্গেই শাইকেভিচ বলেন, টার্গেটকৃত কর্মকর্তাদের ইমেইলে প্রবেশ, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও পাসপোর্ট স্ক্যানের উদ্দেশ্যে এ আক্রমণ চালানো হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে হ্যাকাররা উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে সফল হয়েছে।

হ্যাকারদের হামলার কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করেছে চেক পয়েন্ট। এর মধ্যে একবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইডি থেকে জিপি লিভনিকে ইমেইল করা হয়। ওই কর্মকর্তার প্রকৃত আইডি হ্যাক করে সেখান থেকেই লিভনির সঙ্গে কয়েকবার ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়।

জানা গেছে, যে কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে লিভনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। একসময় তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর কিছু স্পর্শকাতর দায়িত্বে ছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, সন্দেহভাজন ইরানি হ্যাকাররা ওই সাবেক মেজর জেনারেলের আইডি বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যবহার করেছে। তাদের কৌশল ছিল, বিশ্বস্ত আইডি থেকে বারবার যোগাযোগ করে টার্গেটের সঙ্গে এক ধরনের সুসম্পর্ক তৈরি করা। কিছুদিন যোগাযোগের পর ম্যালওয়্যারবাহী ডকুমেন্ট অথবা ফিসিং পেজের লিঙ্ক পাঠানো হতো।

সাবেক ইসরায়েলি মন্ত্রী জিপি লিভনিকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার ইমেইল থেকে একটি ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছিল। সন্দেহভাজন হ্যাকার তাকে একাধিক ইমেইলে ওই ডকুমেন্টটি খুলে দেখার অনুরোধ জানানোয় লিভনির সন্দেহ হয়। এরপর তিনি সরাসরি ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে এতোদিন যার সঙ্গে ইমেইল বিনিময় করছিলেন তিনি প্রকৃত ব্যক্তি নন।

চেক পয়েন্ট বলেছে, সন্দেহভাজন হ্যাকার যে ডোমেইন নেম ইউজ করেছে সেটা ২০২০ সালে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীদের টার্গেট করতে ইরানি হ্যাকাররা ব্যবহার করেছিল। এর আগে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীদের টার্গেটের জন্য ইরানি হ্যাকারদের দুষেছিল মাইক্রোসফট। এবারের কয়েকটি ফিসিং আক্রমণ টার্গেটকৃত ব্যক্তির তথ্য, পাসপোর্ট ইত্যাদি হাতিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছে বলে সের্গেই শাইকেভিচ জানান।

সাবেক ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের ইমেইল হ্যাকিংয়ের জন্য ফসফরাস নামে পরিচিত একটি ইরানি হ্যাকার গ্রুপকে চিহ্নিত করেছে চেক পয়েন্ট। কম্পিউটার সিকিউরিটি গবেষকরা গ্রুপটিকে এপিটি থার্টি ফাইভ ও চার্মিং কিটেন নামেও ডেকে থাকেন।

জানা গেছে, ফসফরাস গ্রুপের সন্দেহভাজন হ্যাকাররা এবার বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাকে ফিসিং লিঙ্কের ফাঁদে ফেলেছে। এর মধ্যে একটি লিঙ্কে টার্গেটকৃত কর্মকর্তাকে বিদেশে কনফারেন্সে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। আরেক টার্গেটকে পাঠানো হয় ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা খাতের একটি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট এতোটাই বিভ্রান্ত হয়েছিলেন যে তিনি হ্যাকারের কাছে নিজের পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়েছিলেন।

এর আগে ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রার্থীর ক্যাম্পেইন টিমকে টার্গেটের জন্য ফসফরাসকে অভিযুক্ত করেছিল মাইক্রোসফট।