ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা

ইউক্রেনের গুদামগুলোতে মজুত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানির পথ সুগম করতে সমঝোতায় উপনীত হয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন ও তুরস্ক। এর আওতায় তিন দেশ ইউক্রেনের শস্য বোঝাই জাহাজের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে একটি যৌথ কমান্ড গঠন করবে।

ইউক্রেনের বন্দরে খাদ্য বোঝাই জাহাজের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতে যোগাযোগ রাখবে তিন দেশ

তুর্কি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির সুবিধার্থে মস্কো, কিয়েভ ও আঙ্কারার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি জরুরি যোগাযোগ চ্যানেল চালু করবে। তিনটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন করে কর্মকর্তা বিষয়টি সমন্বয় করবেন।

এর আগে রুশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে বন্দরগুলোতে জাহাজ চলাচল চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকার মারিওপোল, বারদিয়ানস্ক ও খেরসন বন্দর স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত হলেও কেবলমাত্র মারিওপোল বন্দরে জাহাজ চলাচল চালু করা সম্ভব হয়েছে।

তারা বলেন, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের পুঁতে রাখা মাইন অপসারণ না হওয়ায় বারদিয়ানস্ক বন্দরে এখনো জাহাজ নোঙর করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে খেরসন বন্দরের পোতাশ্রয় থেকে মাইন অপসারণ সম্পন্ন হলেও ইউক্রেনীয় পক্ষের অতর্কিত গোলাবর্ষণের আশঙ্কায় সেখানে নোঙর করা জাহাজগুলো বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রুশ বাহিনী বন্দরগুলো দখল করে নেবে এমন আশঙ্কা থেকে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ মাইন অপসারণে আগ্রহ দেখায়নি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেলে কিয়েভের কর্মকর্তারা নতুন করে ভাবতে পারেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে খেরসন, নিকোলায়েভ, চেরনোমরস্ক, ওচাকভ, ওডেসা ও জুঝনি বন্দরে ১৬ দেশের মোট ৭০টি জাহাজ আটকা পড়ে আছে। পোতাশ্রয়ের কাছে মাইন পুঁতে রাখায় এবং যে কোনো মুহূর্তে গোলাবর্ষণের ঝুঁকি থাকায় নাবিকরা নৌযানগুলোকে বহিঃসমুদ্রে সরিয়ে নিতে পারছেন না।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কনাশেঙ্কভ অভিযোগ করেন, যে দেশগুলোর পতাকাবাহী জাহাজ আটকা পড়েছে, সে সব দেশের প্রতিনিধিরা কিয়েভের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ছয়টি বন্দরে আটকা পড়া জাহাজের নিরাপদে সরে যাবার সুবিধার্থে রাশিয়ার নৌবাহিনী প্রতিদিন মস্কো সময় সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইউক্রেনের জলসীমা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ১৩৯ মাইল দীর্ঘ ও ৩ মাইল প্রশস্ত মানবিক নৌ চলাচল করিডর বজায় রাখছে।

এর আগে গত মাসের শেষদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক ফোনালাপে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ খাদ্য পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি রোধে ইউক্রেনের মজুত শস্য বাজারে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় তিন নেতা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে একমত হন।

ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি নিয়ে মস্কো, কিয়েভ ও আঙ্কারার ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার পরপর কিয়েভে ফরাসি ও জার্মান নেতাদের উপস্থিতি বিষয়টিতে অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।