ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, ত্রাণের খাবারে ঝুঁকছে উন্নত দেশ!

ভয়াবহ এক চিত্র উঠে এসেছে পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে। ৪৪টি উন্নত অর্থনীতির দেশ নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ৩৭টি দেশেই মুদ্রাস্ফীতির হার কমপক্ষে দ্বিগুণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৬টি দেশের মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধির হার হয়েছে চারগুণ।

ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, ত্রাণের খাবারে ঝুঁকছে উন্নত দেশ!

মুদ্রাস্ফীতির খাড়া থেকে ছাড় পায়নি ‘মহাজন’ খ্যাত দেশগুলোও। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানিসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও মুদ্রাস্ফীতির চাপে চ্যাপ্টা হচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্তসহ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষগুলো। ঝুঁকছে ত্রাণের খাবারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় চাপে রয়েছে প্রায় সব দেশই।

খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সংকুলান করতে না পেরে ত্রাণের (ফুড ব্যাংক) খাবারের দিকে ঝুঁকছেন উন্নত দেশের অনেক মানুষই। ব্রিটেনে তো একবেলা খাবার বাদ দিয়েছেন অনেকেই।

ব্রিটেনে চোখ রাঙাচ্ছে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি। আগামী গ্রীষ্মে খাদ্যের দাম ১৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব গ্রোসারি ডিস্ট্রিবিউশন (আইজিডি)। দেশটিতে ১৯৭০ পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ে সর্বোচ্চ মূল্যের মুখোমুখি। অন্যান্য খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে পশুখাদ্যের দামও।

জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারের দাম বেড়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। ব্রিটেন তার খাদ্যের প্রায় ৪০ শতাংশই আমদানি করে থেকে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সে আমদানিও এখন বন্ধ।

আইজিডি প্রধান অর্থনীতিবিদ জেমস ওয়ালটন বলেছেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে দুর্বল পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক পরিবার লড়াই করছে। দুর্বল শ্রেণি আরও দুর্বল হচ্ছে।

এ অবস্থায় পড়ে ব্রিটেনজুড়ে ত্রাণ সরবরাহকারী ফুড ব্যাংকগুলোতে দ্বারস্থ হওয়ার হিড়িক পড়েছে। যদিও বিপুল পরিমাণ লোককে খাওয়ানোর মতো পর্যাপ্ত ফুড ব্যাংক ব্রিটেনে নেই।

একটি ত্রাণ সংস্থা ফেলিক্স প্রজেক্টের কমিউনিটি এনগেজমেন্টের প্রধান র‌্যাচেল লেডউইথ জানান, গত বছর তিন কোটি খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছিল। তিনি বলছেন, আমি মনে করি চলতি পরিস্থিতিতে এর চাহিদা বাড়বে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ। এমনকি এই সংখ্যা ৭৫ শতাংশে পৌঁছালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

খাদ্য সংকট মেটাতে ফুড ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন জার্মানরাও। টাফেল ফুড ব্যাংক নেটওয়ার্কের একজন মুখপাত্র জানান, বছরের শুরু থেকে সারাদেশে ফুড ব্যাংকের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিছু এলাকায় এ চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে।

পিউ রিসার্চের অধ্যয়ন করা দেশগুলোর মধ্যে চোখ কপালে তুলেছে তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতি। ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশটিতে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫৪.৮ শতাংশ। গত দুই বছরে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে ইসরায়েলে। ২০২০ সালের তুলনায় যা ২৫ গুণ বেশি। তালিকায় রয়েছে ইতালি, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস ও যুক্তরাষ্ট্রের নামও।