গোনাহ মাফের এই তো সুযোগ!
- Details
- by রামাদান
একে একে দুটো সিয়াম পালন করে এখন আমরা তৃতীয় রোজা অতিবাহিত করছি। পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আল্লাহর অশেষ শোকরিয়া তিন আমাদের সুস্থ রেখেছেন। শুধু তাই নয়, রমজানের মত দামি একটা উপহার আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।
এ উপহার সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলেই আমরা সফল হবো। আর যদি এবারও হেলায়ফেলায় রমজান কেটে যায়, তাহলে আমাদের মত ক্ষতিগ্রস্ত-হতভাগা আর কেউ হবে না।
বুখারি শরিফের কিতাবুল ইমানে জলিলে কদর সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেছাবের সঙ্গে মাহে রমজানের রোজা পালন করবে, তার পূর্বের জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ বুখারি, হাদস নম্বর ৩৮।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় পাকিস্তানের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ড. তাহেরুল কাদেরি বলেন, ‘শুধু রোজা রাখলেই হবে না হৃদয়ে ইমানও থাকতে হবে। আর ইমান হলো আল্লাহর রাসুল (সা.) যা নিয়ে এসেছেন তা মনে প্রাণে সত্য বলে মেনে নেওয়া। অসংখ্য বিধিবিধানের সঙ্গে রোজাও রাসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয়েছন এবং রোজা রাখা আমার জন্য আবশ্যক, যখন বান্দার মনে এমন ধারণা গেঁথে যাবে এবং এ পবিত্র ধারণা নিয়ে সে রোজা রাখা শুরু করবে, তখনই সে হাদিসে বলা ‘ইমানের রোজা’ পালন করবে।’
ইহতিসাবের ব্যাখ্যায় ড. তাহেরুল কাদেরি বলেন, ‘ইহতিসাবের এক অর্থ হলো ইখলাস। অর্থাৎ বান্দা রোজা রাখবে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় এবং নিজের ভেতরের খারাপ ও মন্দ অভ্যাসগুলো বর্জনের নিয়তে। এমন রোজার মাধ্যমেই নফস কাবু হবে এবং প্রভু খুশি হবেন। আর খুশির প্রতিদান হিসেবে বান্দার জীবনের পূর্বের সব গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ ফালাসাফায়ে সিয়াম, ১৮ পৃষ্ঠা।
একই কথা আরেকটি হাদিসে ভিন্নভাবে বলা হয়েছে। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবসহ মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা করবে, তাকে আল্লাহ সদ্য ভুমিষ্ট শিশুর মত মাসুম-নিষ্পাপ করে দেবেন। অর্থাৎ তার আমলনামা থেকে গোনাগুলো মুছে দেওয়া হবে।’ সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ২২০৮।
রোজাদারের পুরস্কারের অনাবিল ঝর্ণাধারা এখানেই শেষ নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হলো যখন সে প্রভুকে দেখবে।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৮০৫।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় সুফি সদর উদ্দিন চিশতি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ সিয়াম দর্শনে লিখেছেন, ‘এখানে দুটি সিয়ামের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো দেহের সিয়াম। অন্যটি আত্মার। দেহ ইফতারের সময় খাবার খেয়ে সন্তুষ্ট হবে। আর আত্মা জান্নাতে আল্লাহর দিদার পেয়ে তৃপ্ত হবে। হাদিসে এ কথাই বলা হয়েছে।’
ড. তাহেরুল কাদেরি একটি চমৎকার উদহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, শহিদেরা মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দিদার পাবে। তারপর তারা জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে উড়তে থাকবে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা আর কী চাও আমার কাছে? জবাবে তারা বলবেন, হে আল্লাহ! আপনার দিদারের মত প্রশান্তি! এত তৃপ্তি! আর কিছুতেই পাইনি। আপনি আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠান, আমরা আবার শহিদ হই এবং আপনার দিদাদের জন্য ধন্য হই।
তাহেরুল কাদেরি বলেন, ‘জান্নাতিরা আল্লাহর দর্শনের জন্য বারবর শহিদ হতে চাইবেন, আর আল্লাহ নিজে আগ্রহ করে সিয়ামপালনকারীদের দিদার দেবেন। সিয়ামের মর্যাদা তাহলে কত উপরে ভেবে দেখুন!’ ফালাসাফায়ে সিয়াম, ১৯ পৃষ্ঠা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর