বায়ুমণ্ডলে অবিচ্ছিন্নভাবে ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের (সিএফসি) মাত্রা কমতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে এমএসএন ডটকম। মাঝখানে এ কমার হার বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পাওয়ায় পৃথিবীকে রক্ষাকারী এ ওজোনস্তরের ক্ষত সারছিল না।

ozone layer rescued homeওজোন স্তরে সিএফসির ক্ষত সেরে উঠছে

২০১৮ সালে বায়ুমণ্ডলে সিএফসির উপস্থিতি বৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে চীনের পূর্বাঞ্চলে অবৈধভাবে সিএফসি উৎপাদনকে দায়ী করা হয়েছিল।

এ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর দৃশ্যত ওজোনস্তরের নিরাময় প্রক্রিয়া আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো।

একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের কয়েক বছর ধরে চালানো রসায়নভিত্তিক গোয়েন্দা তৎপরতার পর তৈরি প্রতিবেদন দুই পর্বে ‘ন্যাচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

প্রথম নিবন্ধে বলা হয়, সিএফসি উৎপাদনের ওপর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পরিপালনের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন, বিশেষত সিএফসি’র বিশেষ শ্রেণি সিএফসি-১১-এর নিঃসরণ কমেছে।

ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর, যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশি হয়। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের পর থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মোট ওজনের প্রায় চার শতাংশ ধ্বংস হয়েছে।

ওজোন স্তরকে রক্ষা করতে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়ল চুক্তি সাক্ষরিত হয় এবং ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হয়। মন্ট্রিয়ল চুক্তি হচ্ছে ওজোন স্তর রক্ষা করার জন্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি।

ozone layer rescuedওজোন স্তরে সিএফসির ক্ষত সেরে উঠছে

এ পর্যন্ত মন্ট্রিয়ল চুক্তি পাঁচবার সংশোধন হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়।

সাধারণ ফ্রিজ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে এইচএফসি বা হাইড্রোফ্লোরোকার্বন নামে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তা পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য ২০১৬ সালে একটি বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। প্রায় ২০০ দেশ এই ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তিতে সম্মতি দেয়।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এইচএফসি একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস হিসেবে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী এবং এর উচ্ছেদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

ওজোন স্তরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এই এইচএফসির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু এর খারাপ দিকটি হলো, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যে কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় এই হাইড্রোফ্লোরোকার্বনই অনেক বেশি দায়ী।

অ্যান্টার্কটিকার ওপর ওজোন স্তরে বড় রকমের গর্ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে, এই আশঙ্কায় ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিয়ল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য ছিল ওজোন স্তর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী সব ধরনের ক্লোরোফ্লোরোকার্বন বা সিএফসিকে নির্মূল করা।

ক্ষতিকর এই সিএফসিকে প্রতিস্থাপন করা হয় কারখানায় উৎপাদিত হাইড্রোফ্লোরোকার্বনের সাহায্যে। এই কেমিক্যাল একই কাজ করে, কিন্তু পৃথিবীকে রক্ষাকারী ওজন স্তরের কোনো ক্ষতি করে না। এর ব্যবহার শুরু করার পর ইতিবাচক ফলও দেখা দিতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা বললেন, গর্ত হয়ে যাওয়া ওজন স্তর কোথাও কোথাও বুজে আসতে শুরু করেছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই হাইড্রোফ্লোরোকার্বনের বড় ধরনের একটি সাইড এফেক্ট দেখা গেল। এই এইচএফসি বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি পরিমাণে ধরে রাখতে পারে।

ওজোন স্তরকে অক্ষত রাখতে এই হাইড্রোফ্লোরোকার্বন সহায়তা করলেও এই রাসায়নিক উপাদান বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.