আসছে সহজে করোনা পরীক্ষার যন্ত্র!

বর্তমানে সন্দেহভাজন রোগীদের নাক ও গলার লালা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় ওই ব্যক্তি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত কি না। এবার বিজ্ঞানীরা এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করতে যাচ্ছেন যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস বিশ্লেষণ করেই বলে দিতে পারবে তিনি সংক্রমিত কি না। তবে যন্ত্রটি আরো গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্ভাবকরা।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা- প্রতীকী ছবি

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ যন্ত্রটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ তৈরির কাজ করছে চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। গবেষকদের দাবি, তাদের তৈরি যন্ত্রটি যদি অনুমোদন পায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি পরিমাণ মানুষের সহজে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা যাবে। এতে বর্তমানে করোনা পরীক্ষা করা হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ অনেকটা কমবে।

গবেষকদের মতে, বর্তমানে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করায় রিপোর্ট আসতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। তাছাড়া নাক ও গলার নমুনা সংগ্রহ করাটাও রোগীদের জন্য অনেকটা অস্বস্তিকর। এ পদ্ধতির কারণে নমুনা পরীক্ষার হারও অনেকটা কম। তাই তারা এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করছেন- যা তুলনামূলক সহজ, সাশ্রয়ী ও দ্রুত করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষা করা হলে, সংক্রমণ ও মৃত্যুহারও অনেকটা কমে যাবে।

করোনাভাইরাস- প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটির গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ ‘এসিএস ন্যানো’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে গবেষকরা বলেছেন, তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি অনেকটা অ্যালকোহল পরীক্ষার জন্য যে ব্রেথালাইজার ব্যবহার করা হয় সে রকম। এতে অতিক্ষুদ্র ন্যানোপার্টিকেলের বিশেষ সেন্সর রয়েছে। যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম।

তারা আরো জানান, যন্ত্রের বিশেষ সেন্সরটিতে তারা স্বর্ণের ন্যানোপার্টিকেলের সন্নিবেশে এক ধরনের অনু যুক্ত করেছেন। যা বিভিন্ন ভাইরাস ও আক্রান্ত কোষ থেকে নির্গত ভোলাটাইল অরগানিক কম্পাউন্ডসের (ভিওসিওস) সংস্পর্শে আসলে বিক্রিয়া শুরু করে এবং বৈদ্যুতিক প্রতিরোধের উপাদানে পরিবর্তন ঘটে।

তারা যন্ত্রটি দিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৫৯ জন, সুস্থ ব্যক্তি ৫৮ জন এবং ফুসফুসে সংক্রমণের শিকার ৩৩ জন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে দেখেছেন। এসব স্বেচ্ছাসেবীদের ১-২ সেন্টিমিটার দূর থেকেই যন্ত্রটিতে দিয়ে তিন সেকেন্ড সময় ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেন গবেষকরা। পরে পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৭৬ শতাংশের ক্ষেত্রেই সঠিক ফলাফল দিয়েছে যন্ত্রটি। এছাড়া ফুসফুসের সংক্রমণ ও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে পার্থক্য শানাক্ত করতে পেরেছে ৯৫ শতাংশ এবং করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করতে পেরেছে ৮৮ শতাংশ।

গবেষকররা এ যন্ত্রটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা করছেন। তারা জানান, এ যন্ত্রের মাধ্যমে কারো করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হলে ওই ব্যক্তির সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে আরও পরীক্ষা করতে হবে কি না, তা আগেরবারের ফলাফল দেখেই ধারণা পাওয়া যাবে।