ফ্রান্স বিশ্বকাপের দারুণ সফলতা নিয়ে ফিফা যখন আনন্দে মাতোয়ারা, যখন তারা পরের বিশ্বকাপে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত, তখনই নেমে আসে অনিশ্চয়তার অন্ধকার। মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় ‘দুর্যোগ’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঘাতে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ আয়োজন ছিটকে যায় মাঠের বাইরে। এই প্রশ্নে তখন ফিফার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ— আবার কি বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব হবে? সেই দুশ্চিন্তার দৈর্ঘ্য বাড়তে বাড়তে ছুঁয়ে ফেলে এক যুগ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে বসে বিশ্বকাপের পরের পর্ব। ইউরোপের সাথে অভিমান করে আগে দুই বিশ্বকাপ বয়কট করা উরুগুয়ে ব্রাজিলে ফিরেই জিতে নেয় তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। স্বপ্নের এই প্রত্যাবর্তনপর্বে তারা মারাকানার বিখ্যাত ফাইনালে হারায় স্বাগতিক ব্রাজিলকে।

a moment of brazil vs uruguay 1950 world cup match at maracana stadium

১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইউরোপের দুটি দেশ ঘুরে বিশ্বকাপ ল্যাটিন আমেরিকায় ফেরে ‘জুলে রিমে কাপ’ নামে। দীর্ঘ ২৫ বছর ফিফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জুলে রিমকে বিদায়ী অর্ঘ্য হিসেবে এমন কেতাবি নাম দেওয়া হয়।

এই আসরের আয়োজন নিয়েও মঞ্চস্থ হয় নানা নাটক। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় ব্রাজিল এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে খেলতে হয়নি বাছাইপর্ব। মূলপর্বের বাকি ১৪টি দল নির্ধারণ করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় ফিফাকে। কারণ নিজেদের মহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিতে চায় ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা ও পেরু। আগের দুই আসরের রানার্সআপ হাঙ্গেরি এবং চেকোস্লোভাকিয়াও বাছাইপর্ব না খেলার জোরালো দাবি তোলে।

তাদের সেই আন্দোলনে আবার যোগ দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন। শেষ অবধি বিশ্বকাপই বর্জন করে বসে এই দশটি দল। এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগটা পায় ভারত। কিন্তু অদ্ভুত এক দাবি তোলে দেশটি। বুট নয়, খালি পায়ে বিশ্বমঞ্চে খেলার আবদার জানায় তারা! তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে দেয় ফিফা।

অনেক নাটকের পর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিল বিশ্বকাপ। যে ১৩টি দল নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ আয়োজন হয় সেগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল (স্বাগতিক), বলিভিয়া, চিলি, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, ইতালি, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুগোস্লাভিয়া ও সুইজারল্যান্ড।

নক আউট পর্ব ও রবিন লিগ রাউন্ড নিয়ে আগের তিনটি বিশ্বকাপে কম বেশি সংকট তৈরি হওয়ার ইতিহাস ছিলো।  ব্রাজিল বিশ্বকাপে তা নেয় নতুন মোড়। পুরো টুর্নামেন্টই আয়োজন করা হয় রবিন লিগ রাউন্ড পদ্ধতিতে! ১৩টি দলকে চার ভাগে বিভক্ত করে আয়োজন করা হয় প্রথম রাউন্ডের। সেখান থেকে প্রত্যেক গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন উঠে যায় শেষ চারে।

এটাই ছিল ইতিহাসের একমাত্র বিশ্বকাপ, যেখানো ছিলো না কোনো ফাইনাল। ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল-উরুগুয়ের ম্যাচটাই তাই রূপ নেয় ‘অলিখিত ফাইনালে’। যেখানে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফেবারিট ব্রাজিলের ড্র করলেই চলতো। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে জয়েরও ইঙ্গিত দিয়েছিল সেলেকাওরা।

কিন্তু স্টেডিয়ামের প্রায় দুই লাখ দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়ে ১৩ মিনিটের ব্যবধানে দু'দুটি গোল করে বসে উরুগুয়ে। ব্রাজিলিয়ানদের উচ্ছ্বাসে কাঁপতে থাকা মারাকানা স্টেডিয়াম তখন হয়ে ওঠে মৃত্যুপুরী। ২-১ গোলের হারে রচিত হয় ব্রাজিলের ‘মারাকানা ট্রাজেডি’। দুঃস্বপ্নের ওই হার ব্রাজিলিয়ানদের জন্য হয়ে আছে চিরকালীন এক আক্ষেপের নাম।

পুরো আসরে দাপট দেখানো ব্রাজিল শিরোপা জেতার ম্যাচে হারিয়ে ফেলে খেই। ঘরের মাঠটাই তাদের কাছে ধরা দেয় চিরঅচেনা হয়ে। যেখানে বিজয়োল্লাসে মাতে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক ও বিজয়ী উরুগুয়ে। আগের দুই আসরে না খেলার অভিমান পর্ব শেষ এমন প্রত্যাবর্তনই নিশ্চয় স্বপ্নে দেখেছিলো তারা। মারাকানার ওই হারে শিরোপা না জিততে পারলেও ব্রাজিলের সান্ত্বনা হয়ে থাকে প্রথমবার রানার্সআপ হওয়ার গর্ব। এ ছাড়া আট গোল করে এডমিয়ারের  গোল্ডেট বুট জেতাও হয়ে থাকে ব্রাজিলের সান্ত্বনার উপলক্ষ্য। ঘটনাবহুল ১৯৫০ বিশ্বকাপের পর ফুটবলের শ্রেষ্ঠ আয়োজন আর কখনোই মাঠের বাইরে চলে যায়নি। 

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.