লিওনেল মেসির অবিশ্বাস্য পারফর্মে ভর করে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠে দারুণ জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর গ্যালারি স্তব্ধ করে দিয়ে বার্সেলোনা উঠে গেছে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে বার্সেলোনার পয়েন্টের কোনো ব্যবধান অবশ্য নেই। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় এক নম্বরে এখন বার্সেলোনাই।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এ দিন তিল ধারণের ঠায় ছিলো না। দর্শকে ভরা গ্যালারি মনে প্রাণে চাইছিলো নিজেদের দল, রিয়াল মাদ্রিদের জয়। কিন্তু মেসির অবিশ্বাস্য নৈপুন্যে সেটা সম্ভব হয়নি। বার্নাব্যুর দর্শকদের ঘরে ফিরতে হয়েছে একরাশ বেদনা নিয়ে।
ঘটনাবহুল ম্যাচে ভাগ্য ছিলো পুরোপুরি মেসির দিকে। মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা অসংখ্যবার অহেতুক ফাউলের শিকার বানিয়েছেন মেসিকে। একবার তো তাদের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলোর কনুইয়ের আঘাতে রক্তই ঝড়েছে মেসির ঠোঁট থেকে। প্রথমার্ধের অনেকটা সময় দুই ঠোঁটের মাঝখানে টিস্যু জড়িয়ে খেলেছেন পাঁচবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার। পরে মেসিকে অহেতুক দৃষ্টিকটু ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায় রামোস।
এরপরও বারবার ফাউলের শিকার হয়েছেন মেসি। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিতে এতোটুকু কার্পণ্য করেননি তিনি। যদিও ম্যাচের প্রথমটা গোল দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদই। ২৮ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান কাসেমিরোর গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
বার্সেলোনা অবশ্য তেমন সময়ই নেয়নি সমতায় ফিরতে। ৩৩ মিনিটে মেসি দারুণ দক্ষতায় ম্যাচে ফেরান দলকে। প্রথমার্ধে আর কোনো দল গোল করতে পারেনি। ১-১ গোলের সমতা নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রতি আক্রমণে মাদ্রিদের রক্ষণের পরীক্ষা নেয় বার্সেলোনাও। কিন্তু কোনো দলই গোলের দেখা পাচ্ছিলো না। ৭৩ মিনিটে গিয়ে রাকিতিচের মাধ্যমে শেষ হয় গোলের অপেক্ষা। বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন তিনি।
১২ মিনিট পর, বদলি হিসেবে নামা জেমস রদ্রিগেজ এগিয়ে থাকা বার্সাকে টেনে নিচে নামান। আবার সমতায় স্থির হয় ম্যাচ। তখন মনে হয়েছিলো ২-২ গোলে ড্রয়েই বোধহয় শেষ হয়ে এল ক্লাসিকোর উত্তেজনা। কিন্তু তখনও যে মেসির যাদু বাকি। ৯০ মিনিটে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের গোলবারের সামনে তৈরি হওয়া জটলা থেকে গোল করে বসেন মেসি। ৩-২ গোলের ব্যবধানে নিশ্চিত হয় বার্সার জয়। জয়সূচক গোলটি বার্সার জার্সিতে মেসির ৫০০ তম গোল। মেসির এমন আলো ঝলমলে ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো।
একই সঙ্গে লা লিগায় অনুষ্ঠিত হওয়া এল ক্লাসিকোতো এটি তার ১৫তম গোল। যা দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ১৫ গোল পূর্ণ করে বার্সেলোনার কিংবদন্তী আলফ্রেড ডি স্টেফানোকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি।
৩-২ ব্যবধানে মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকো শেষ হয়েছে বটে, তবে সম্ভাবনা আরো অনেক গোলের। কিন্তু দুই দলের গোলরক্ষকের অবিশ্বাস্য কিছু সেভ সে সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া দুই দলই মিস করেছে সহজ গোলের অনেকগুলো সুযোগ।
এই জয়ের মাধ্যমে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকছে বার্সেলোনা। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ যদি তাদের বাকি থাকা পাঁচ ম্যাচের সবগুলো জিতে যায়, তবে এবারের লা লিগার শিরোপাটা হবে তাদেরই।