আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষাই নিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মহাযুদ্ধটা। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিতল রিয়াল মাদ্রিদ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ডাবলস নৈপুণ্যে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটে এক হাত রাখলো জিনেদিন জিদানের দল। বৃহস্পতিবার নকআউট পর্বের প্রথম লেগে স্প্যানিশ জায়ান্টরা পিএসজিকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ৬ মার্চ পিএসজির মাঠ পার্ক ডু প্রিন্সেসে মঞ্চায়ন হবে দ্বিতীয় লেগের মহারণ।
লা লিগায় শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্নটা জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে অনেক আগেই। স্প্যানিশ কোপা ডেল রে থেকেও ছিটকে গেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগই ছিল রিয়াল মাদ্রিদের শেষ ভরসা। পিছিয়ে থেকেও তুলে নিয়ে, নিজেদের রাজত্বে রিয়াল হাজির হলো চেনারূপেই। কে বলবে এই দলটাই মৌসুমের শুরু থেকে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে!
ক্লাব ফুটবলের অভিজাত দুই দলের লড়াইটা শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচে প্রথম লিড নেয় পিএসজি, আদ্রিয়েন রাবিয়টের মৌসুমের ষষ্ঠ গোলে। দুর্দান্ত এক শটে রিয়ালের জাল কাঁপিয়ে অতিথিদের উচ্ছ্বাসে ভাসান রাবিয়ট, পরাস্ত করেন স্বাগতিক গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে। ম্যাচের বয়স তখন ৩৩ মিনিট।
অবশ্য ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু ২৭ মিনিটে পিএসজি গোলরক্ষক আলফোন্স অ্যারেওলাকে প্রায় একা পেয়েও গোলের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেননি রোনালদো। পর্তুগিজ উইঙ্গারের শট রুখে দেন পিএসজির শেষ প্রহরী। ৭ মিনিটের ব্যবধানে আরো একটি সহজ সুযোগ মিস করেন বর্ষসেরা ফুটবলার। শট নেন ক্রসবারের কয়েক ফুট ওপর দিয়ে। একটুপর বেনজেমার শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন পিএসজির গোল পোস্টের অতন্দ্র পহরী।
অবশেষে ৪৫ মিনিটে শাপমোচন করেন রোনালদো, পেনাল্টি থেকে গোল করে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে স্পর্শ করলেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শততম গোলের মাইলফলক। স্পট কিক থেকে গোল করে উঠলেন অনন্য উচ্চতায়। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে এক জার্সিতে গোলের সেঞ্চুরি করলেন রোনালদো। লো চেলসো টনি ক্রুসকে পেছন থেকে না ছুঁলেই পারতেন, পিএসজির ডি-বক্সে পড়ে গিয়ে পেনাল্টি আদায় করে নিলেন রিয়াল মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষে এই পেনাল্টিকে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেফারিকে এক হাত নিয়েছেন পিএসজি কোচ উনাই এমেরি।
রিয়ালের পরের গোল দুটোতে অবশ্য বিতর্ক ছিল না। শেষ দিকে পরপর দুই গোল করে ম্যাচের লাগামটা নিজেদের হাতে টেনে নেয় স্বাগতিক শিবির। ৮৩ মিনিটে রোনালদো এই মৌসুমে লিগের ১১তম গোল করলেন, চার মিনিট আগে পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নামা অ্যাসেনসিওর দুর্দান্ত ক্রস থেকে। গোলমুখের সামনে হাঁটুতে বল ছুঁয়ে ডাবলস পূর্ণ করেন পর্তুগিজ যুবরাজ। এই গোলের রেশটা তাজা থাকতেই পিএসজির কফিনে আরেকটি পেড়েক ঠুকে দেন মার্সেলো (৩-১)।
ব্রাজিলিয়ান রক্ষণপ্রহরীর দারণ শটটা আশ্রয় নেয় পিএসজির জালে। এই গোলের কারিগরও অ্যাসেনসিও। ৭৯ মিনিটে ইস্কোর বদলি হিসেবে নামিয়ে ম্যাচের চেহারাটাই পাল্টে ফেলেন রিয়াল কোচ জিদান। এমন জাদকুরি সিদ্ধান্ত তো ফ্রেঞ্চ কোচকে নিতেই হতো। চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য এই মহারণটাই যে ছিল তার জন্য ডু অর ডাই সমীকরণের। তাতে এ যাত্রায় নির্ভার হলেন তিনি।
কিন্তু কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিয়েই ঘরে ফিরতে হলো পিএসজি কোচ এমরিকেকে। মৌসুমের চতুর্থ হারটা যে দলের শিরোপা স্বপ্নটাকেও থমকে দিয়েছে! একজন অধিনায়ক ও সেরা ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতি ম্যাচে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটাও হাড়ে হাড়ে টের পেলেন তিনি। এদিন এমেরি একাদশেই রাখেননি ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ও নিয়মিত অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাকে। পিএসজির হারটা গ্যালারিতে বসেই দেখলেন সিলভা।
প্রকৃতপক্ষে লড়াইটা ছিল এমএনসি (এমবাপ্পে-নেইমার-কাভানি) ও বিসিবির (বেল-বেনজেমা-ক্রিশ্চিয়ানো) মধ্যে। কিন্তু পিএসজির ত্রিফলা এদিন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলল নিজেদের ছায়া হয়ে। বিবিসির সঙ্গে পেরে উঠল না মৌসুমের সবচেয়ে বিধ্বংসী আক্রমণভাগ। আসলে বিবিসি নয়, এএমসির (অ্যাসেনসিও-মার্সেলো-ক্রিশ্চিয়ানো) কাছে!