বিধ্বস্ত বার্সা, যেনো রূপকথারই জন্ম দিল রোমা

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল স্টাডিও অলিম্পিকো। উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়ে উঠল এএস রোমার খেলোয়াড়, সমর্থক, কোচিং স্টাফসহ ক্লাব সংশিষ্ট সবাই। ইতালিয়ান ক্লাবটির এই উল্লাস হার মানিয়েছে কোনো চ্যাম্পিয়ন দলকে।

না, ঘরের মাঠে কোনো শিরোপা জেতেনি তারা। রোমার উৎসবের কারণ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ইতিহাস গড়ার, বার্সেলোনাকে বিধ্বস্ত করার। মঙ্গলবার কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে রূপকথারই জন্ম দিল রোমা।

এদিন ফর্মের তুঙ্গে থাকা বার্সাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেল ইতালিয়ান জায়ান্টরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ ব্যবধানে ড্র হলেও অ্যাওয়ে গোলে কপাল পুড়ল মেসি-ইনিয়েস্তাদের। ৩৪ বছর পর ইউরোপিয়ান শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল রোমা।

টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নক আউট পর্বের প্রথম লেগে তিন বা ততোধিক গোল হজম করে পুষিয়ে নিতে পেরেছে মাত্র দুটি দল। একটি এসি মিলান, অন্যটা বার্সেলোনা। গত মৌসুমে শেষ ষোলোতে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ফিরতি লেগে ৬-১ ব্যবধানে পিএসজিকে উড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বার্সা।

স্বপ্ন বাঁচানোর কাজটা যে সহজ হবে না সেটা ম্যাচের আগেই জানিয়ে রেখেছিল রোমা। বার্সার উদ্দেশে হুংকার ছেড়েছিল তারা, বিশ্বাস রেখেছিল নিজেদের ওপর। এই আত্মবিশ্বাসটাই রোমার শিরোপা স্বপ্ন বাঁচাতে জ্বালানি হয়ে কাজ করল।

অবশ্য ইতালিয়ান দুর্গে বার্সেলোনার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এমনিতেও ভালো ছিল না। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইতালির মাটিতে শেষ ছয় ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি কাতালানরা। মঙ্গলবার রোমার বিপক্ষেও তাই জয়ের আশা করেনি বার্সেলোনা। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলটির কোচ এরনেস্তো ভালভার্দে জানিয়েছিলেন গোলশূন্য ড্রয়-ই তাদের লক্ষ্য। পরিকল্পনা মাফিক এদিন রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলল স্প্যানিশ জায়ান্টরা।

সেটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো। রোমার সুন্দর এবং গোছানো ফুটবলে চূর্ণ হলো বার্সার রক্ষণদুর্গ। নিখুঁত এক পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সই উপহার দিল ইতালিয়ান জায়ান্টরা। রোমা কোচ ইউসেবিও ডি ফ্র্যান্সিসকো এমন একটা ম্যাচ উপহার দেওয়ার জন্যই সমর্থকদের বলেছিলেন বিশ্বাস রাখতে।

দারুণ ছন্দে থাকা বার্সাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ভক্তদের আস্থার প্রতিদান দিল রোমা। অথচ প্রথম লেগে কাতালানদের আক্রমণে দিশেহারা এই ক্লাবটিই দু দুটো আত্মঘাতী গোল করেছিল। গতকাল রাতে রক্ষণ দুর্বলতা সামলে বার্সার বিপদসীমাকে শুরু থেকেই কোণঠাসা করে তোলে স্বাগতিক শিবির।

ইতিহাস গড়ার ইঙ্গিতটা ম্যাচের শুরুতেই দিয়েছিল দ্য ইয়েলো রেডরা। ড্যানিয়েল ডি রসির সহায়তায় ম্যাচের মাত্র ছয় মিনিটে স্বাগতিক দর্শকদের উচ্ছ্বাসে ভাসান এডিন জেকো। চ্যাম্পিয়নস লিগের মঞ্চে এনিয়ে বার্সার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ গোল করলেন বসনিয়ান স্ট্রাইকার। তন্মধ্যে গেল সপ্তাহে ন্যু ক্যাম্পে করা জেকোর সেই অ্যাওয়ে গোলটাই গড়ে দিয়েছে তাদের সেমিফাইনাল ভাগ্য।

৫৭ মিনিটে বার্সেলোনার জালে দ্বিতীয়বার বল জড়ায় রোমা। ডি-বক্সে ডি রস্যিকে টেনে ফেলে দিয়ে সতীর্থ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে যে ভুলটা করেছেন সেটার মাশুল দিতে পারেননি বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। পেনাল্টি থেকে বুলেট গতির শটে স্কোর লাইন ২-০ করেন ডি রসি।

আগের লেগে বার্সার চার গোলের সবকটিতেই অবদান ছিল লিওনেল মেসির। স্টাডিও অলিম্পিকে আর্জেন্টিনা সুপারস্টারকে নিষ্প্রভ করে রাখতে যে বিশেষ ছক কষেছিলেন রোমা কোচ সেটারই বাস্তবায়ন করেছেন স্বাগতিক খেলোয়াড়রা। হতাশায় একটা পর্যায়ে তো কলরোভকে পেছন থেকে ট্যাকল করে হলুদ কার্ডও দেখলেন মেসি!

৮২ মিনিটে চেঙ্গিজ আন্ডারের কর্ণারে বলে মাথা ছুঁয়ে ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেন কস্টাস মানোলাস। প্রথম লেগেও অবশ্য জালে বল জড়িয়েছিলেন মানোলাস। তিনি পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন ডি রসি-ও। কিন্তু দুটোই ছিল আত্মঘাতী গোল!

পরিচিত দর্শকদের সামনে এদিন বার্সার জাল কাঁপিয়ে যেন পাপ মোচন করলেন রোমার দুই তারকা ফুটবলার। তাতেই টানা তৃতীয়বারের মতো শেষ আটে থেমে গেল কাতালান ক্লাবটির স্বপ্নযাত্রা। তবে স্বপ্ন বাঁচাতে শেষ কয়েক মিনিটে সম্ভাব্য সেরা চেষ্টাটাই করেছে বার্সা। কিন্তু তাদের মুহুর্মুহু আক্রমণগুলো নিস্ফলা থেকে গেছে।