আপনি পড়ছেন

মিয়ানমারের জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন শরনার্থী হয়ে বাংলাদেশে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে। হত্যাকারীদের হাতে রোহিঙ্গাদের তুলে দেয়া এখন শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থীই নয়, ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীদের হাত থেকে আশ্রয়গ্রহণকারীদের নিরাপত্তাদানে বিশ্বের অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

myanmar village earth view

মিয়ানমার এই সমঝোতা চুক্তিতে সই করেছে কারণ এটি জাতিসংঘ ও এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তাদের জন্য স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এটা খুবই পরিষ্কার যে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মোটেও আগ্রহী নয়। দেশটিতে হাতে গোনা যে ক’জন রোহিঙ্গা এখনও রয়েছেন, মিয়ানমারের অধিবাসীরা তাদের ভীনগ্রহের বাসিন্দা বলে মনে করেন। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নেই, কোন ধরণের মৌলিক অধিকার নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দেশেই নির্যাতিত হয়ে আসছে। দেশটির সরকার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদের বাঙালি তথা বাংলাদেশি বলে দাবি করে।

মিয়ানমার সরকার বরাবরের মতোই বলে গেছে, রাখাইনে যা ঘটেছে তা জাতিগত নির্মূল অভিযান বা গণহত্যা নয় বরং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং রোহিঙ্গাদের জন্য দেশে ফিরে আসা একদমই নিরাপদ। কিন্তু এসব কথার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।

রাখাইনের ছবি, ভিডিও ফুটেজসহ পর্যন্ত নির্যাতনের অসংখ্য প্রমাণ বিশ্ব পেয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগণ নিধন’ বলে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও মিয়ানমারের এই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আন্তর্জাতিক আইন মতে, নৃশংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে যেসব মানুষ দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হয়, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। সর্বোপরি, তারা নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা পায় এবং যে দেশে ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের জন্য আতঙ্কের কারণ, সেখানে ফিরিয়ে না দেওয়ার নিরাপত্তা পায়।

বাংলাদেশ বলছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র যাদের কাছে মিয়ানমারের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে শুধু তাদেরই ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু যারা কাগজপত্র না নিয়েই পালাতে বাধ্য হয়েছে তাদের জন্য কোন আশার আলো নেই। যারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে না, তাদেরকে আজীবন শরণার্থী শিবিরে কাটিয়ে দিতে হবে। যেখানে তাদের জন্য থাকবে না পর্যাপ্ত খাদ্য, নিরাপদ পানি, বসবাসযোগ্য গৃহ বা যথেষ্ট চিকিৎসাসেবা। এসব ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেলে তারা মানবপাচার, অপব্যবহারসহ নানা ধরণের দুঃসহ অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তাদের আদৌই কোন নিরাপদ ভবিষ্যত নেই। বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে থাকা বা হত্যাকারীদের হাতে ধরা দেওয়া, রোহিঙ্গাদের সামনে দুটোই পথ। মিয়ানমার সরকার যে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল অজ্ঞ নয়। তারপরও এই জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষায় কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম কিছু অবশ্যই হওয়া উচিত। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এবার আন্তর্জাতিক মহলের উপর ন্যস্ত। যেসব রোহিঙ্গারা পরিচয়পত্র বা প্রয়োজনীয় কাগজাদি ছাড়া পালিয়ে এসেছে, তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে একাত্ম হতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে অপরাধ স্বীকার করে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে।

স্ক্রল ডট ইন থেকে অনুবাদিত

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.