মসজিদে হিন্দু দম্পতির বিয়ে!

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে যে বিক্ষোভ চলছে তাতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন দেশটিতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঠিক এ আতঙ্কের মাঝেই ঘটলো এক অভূতপূর্ব কাণ্ড। গতকাল রোববার ভারতের কেরালার আলাপুঝা এলাকার চেরুভাল্লি মুসলিম জামাত মসজিদে অনুষ্ঠিত হলো এক হিন্দু দম্পতির বিয়ে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়েছে মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে। কমিটি শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানই পরিচালনা করেনি। নবদম্পতি শরৎ এবং অঞ্জুকে ১০টি স্বর্ণমুদ্রা, নগদ দুই লাখ টাকা, ফ্রিজ, টিভি উপহারও হিসেবে দিয়েছে। সে সাথে চার হাজার মানুষের জন্য নিরামিষ ভোজের ব্যবস্থাও ছিলো। নান্দনিক রূপে সাজানো হয় মসজিদ। বিয়ে পড়ানোর জন্য সেখানে ডেকে আনা হয় এক পুরোহিতকেও।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, অঞ্জুর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। অভাবের তাড়নায় ১৭ বছর আগে জমি-জমা সব বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

এমতাবস্থায় অঞ্জুর মা তার মেয়ের বিয়ের জন্য মসজিদ কমিটির কাছে সাহায্য চান। মসজিদ কমিটি তার অনুরোধে সাড়া দেয়। গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এ বিষয়টি তোলা হলে মুসল্লিরা যে যার মতো অনুদানের ব্যবস্থা করেন।

অঞ্জুর মা বিন্দু জানান, মাসিক ৭ হাজার বেতনে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। যার মধ্যে বাড়ি ভাড়াই চলে যায় আড়াই হাজার রুপি। অবিশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান তিনি। মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছিলেন না। এক প্রতিবেশীর উপদেশ মোতাবেক তিনি মসজিদ কমিটির সাথে যোগাযোগ করে সাহয্য চান।

নবদম্পতিকে আশীর্বাদ দিয়েছেন মসজিদের ইমাম রিয়াসউদ্দিন ফাইজি। মসজিদের সচিব নাজিমুদ্দিন বলেন, তাদের মসজিদে প্রবেশকারী প্রথম নারী হলেন অঞ্জু। সকল ধর্মেই বলা আছে একে অপরকে ভালোবাসার কথা। তা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই মসজিদ কমিটি এই বিয়ের আয়োজন করে।

বিয়েতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

মসজিদ কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বিয়ের একটি ছবি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে সেখানে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ কেরালা। কেরালা সবসময়েই এমন এবং তা বজায় রাখতে হবে।

চলমান আতঙ্কে এ ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, এ বিয়ে এমন সময় হলো যখন ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে সবার উপরে মানুষ। কেরালার মানুষের এ ঐক্য যেন ভারতের প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।