যেভাবে করোনার বিরুদ্ধে সফল ভিয়েতনাম

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশ ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। উল্টো দেশগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম ভিয়েতনাম।

যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলো ভিয়েতনাম

ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর হার শূন্য। আক্রান্তের সংখ্যাও একেবারেই কম। অথচ ভিয়েতনামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ২৩ জানুয়ারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৫ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৯ জন। এদের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। সুস্থ হয়েছেন ১২৩ জন।

চীনের পার্শ্ববর্তী হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে তারা ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে তা প্রশংসনীয়। তাছাড়া  দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো কম হতে পারতো। শুধু একটি ভুলের কারণে সেটি ঠেকিয়ে রাখা যায়নি।

গত ২ মার্চ দেশটির এক প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী ইউরোপের তিনটি দেশ ঘুরে ভিয়েতনামে ফিরে আসেন। তিনি করোনা পরীক্ষা না করে হ্যানয় বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মচারীদের ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকে পড়েন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। পরীক্ষার পর ওই নারীর করোনা ধরা পড়ে।

এরপরই ওই নারী যে বিমানে দেশে ফিরেছিলেন, সে বিমানের সব যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে নেয় ভিয়েতনাম সরকার। যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করেছিলেন সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়। আশপাশের সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এতকিছুর পরও সংখ্যাটা ২৪৯ জনে গিয়ে ঠেকে। অথচ এ ঘটনার পূর্বে দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগী ছিল মাত্র ১৭ জন।

জানা যায়, ৬৬ বছর বয়সী এক ভিয়েতনামী চীনের উহান থেকে দেশে ফেরার পর গত ২৩ জানুয়ারি তার শরীরে করোনা ধরা পড়ে। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৪ জনে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ২ জন চীনা নাগরিক।

এ ঘটনার পর ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পুরো দেশ লকডাউন করে দেয়া হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। পাশাপাশি ভাইরাসটি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এটি কীভাবে ছড়ায়, কী করলে সুস্থ থাকা যাবে, এগুলো জনসাধারণকে জানানো হয়।

দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, সরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ ও রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার যে কর্মসূচি বহুদিন ধরে চর্চা করা হচ্ছে- করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেটি বড় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। যদি ইউরোপফেরত ওই নারী বিমানবন্দরে ফাঁকি না দিতেন, তাহলে রোগীর সংখ্যা অনেক কম হতে পারতো।