করোনাভাইরাস হয়তো কখনোই দূর হবে না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

করোনাভাইরাস হয়তো কখনো চিরতরে চলে যাবে না— পৃথিবীকে সতর্ক করে দিয়ে এমন মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক পরিচালক ডক্টর মাই রায়ান ভাইরাসটির চিরতরে দূরে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন। তিনি ভাইরাসটি নির্মূল করার বিষয়ে কোনো ভবিষ্যতবাণী দিতে পারেননি।

তিনি বরং বলেছেন, ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও এই ভাইরাস হয়তো কখনোই চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যাবে না। ভাইরাসটি নির্মূলের জন্য আরো ব্যাপক ও বিশাল পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সারা পৃথিবীকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ লাখের বেশি মানুষ। কেবল বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসেব অনুসারে পাওয়া তথ্য এটি। মূল আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ দিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমস্যা সেই সব দেশে প্রকট, যেখানে মানিসক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিনিয়োগ অপ্রতুল।

জাতিসংঘ থেকে সব দেশের সরকারকে করোনাভাইরস প্রতিরোধের পাশাপাশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত্নবান হওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আসলে কী বলেছে?

ভার্চুয়াল এক প্রেস কনফারেন্সে ডক্টর রায়ান বলেন, “করোনাভাইরাসের বিষয়টি সব সময় আমাদের মাথায় রাখা উচিত। এটি হয়তো আরো একটি স্থানীয় ভাইরাস হিসেবে থেকে যাবে। আমাদের মনে হয় এটি কখনোই পৃথিবী ছেড়ে যাবে না।”

তিনি আরো বলেন, “এইচআইভি পৃথিবী থেকে চলে যায়নি। যদিও আমরা ভাইরাসটি প্রতিরোধের উপায় পেয়েছি।”

তিনি এ সময় আরো বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন না কেউ এই ভাইরাস নির্মূল হওয়া বিষয়ে কোনো ভবিষ্যতবাণী করতে পারে।

করোনাভাইরাস নির্মূলে অন্তত ১০০টি ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াধীন আছে— কিন্তু ডক্টর রায়ান হামের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই রোগের ভ্যাকসিন আছে, তারপরও পৃথিবী থেকে হাম পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম গেরিবাইসাস জোর দিয়ে বলেছেন, এখনো ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি সবাই যথাযথভাবে চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে কী হবে তা অনেকটা আমাদের হাতেই থাকে। কিন্তু এটার দায়িত্ব সবার। আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি তাহলে এই মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহমারী বিশেষজ্ঞ মারিয়া ফন কেরখোভ বলেন, “আমাদের এটা ভেবে রাখা দরকার যে এই মহামারী নির্মূল হতে অনেকটা বেশি সময় লেগে যাবে।”

সংস্থাটির এমন কঠিন মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করার কথা চিন্তা করছে। এমন কি ইউরোপের অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করে দিয়েছে। অনেক দেশ আবার কখন ও কিভাবে দেশ লকডাউন থেকে বের হবে তার রূপরেখা তৈরি করেছে।

ডক্টর টেড্রোস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, লকডাউন খুলে দেওয়ার পর যে আবার ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন, “অনেকগুলো দেশ লকডাউন শিথিল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের কথা হলো এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে সব দেশেরই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।”