করোনার ভ্যাকসিনের সবশেষ, এগিয়ে আছে যারা

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আতঙ্কে ভুগছে গোট বিশ্ব। একদিকে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে নতুন নতুন নাম যোগ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে। মানবজাতিকে এই সংকটের হাত থেকে রক্ষার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রতিষেধক বর্তমানে হিউম্যান ট্রায়ালেও রয়েছে। তবে এখনও শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হয়নি কোনটিই।

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন- প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করোনাভাইরাসের ১৩টি সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিউম্যান ট্রায়ালের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। উন্নয়নের প্রাথমিক ধাপে রয়েছে আরো ১২০টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন। করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার নিয়ে যুক্তরাজ্য, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও জার্মানির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতাও চলছে।

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিসেবে যে কয়টি ভ্যাকসিন বর্তমানে মানবদেহে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার তৈরি দুটি ভ্যাকসিন এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনকোভ-১৯’। তিনটি ভ্যাকসিনই বর্তমানে হিউম্যান ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীর করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন- প্রতীকী ছবি

এদিকে চীনের ৬টি ভ্যাকসিন বর্তমানে হিউম্যান ট্রায়ালের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। চায়নিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের অধীনে একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছে দেশটির নস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজির গবেষকরা। তাদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি বর্তমানে মানবদেহে পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে প্রতিষেধকটি উৎপাদন শুরু করতে পারবেন বলে আশা করছেন গবেষকরা। এর আগে হেপাটাইটিস-এ এবং পোলিও'র প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছেন এই গবেষকরা।

গবেষণার মধ্যে অন্যতম চীনের চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের (সিএনবিজি) তৈরি ভ্যাকসিন। এর গবেষকরা দাবি করছেন, মানদেহের ওপর সম্পূর্ণ নিরাপদ তাদের ভ্যাকসিনটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, সিএনবিজির গবেষকরা প্রথম ধাপে মাবনদেহে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন। এতে মানবদেহে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেও সবাই সুস্থ আছেন এখন পর্যন্ত।

চীনের ষষ্ঠ ভ্যাকসিন নির্মাতা হিসেবে হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপ শুরু করেছে ক্লোভার। তারা করোনার প্রতিরোধের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন হিসেবে কোভিড-১৯ এস-ট্রিমার সাব-ইউনিট ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন।

অন্যদিকে হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপে রয়েছে জার্মানি কিউরভ্যাক ও মস্কোর গামেলা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে পরীক্ষার প্রথম ধাপের ফলাফল জানা যেতে পারে বলে জানিয়েছে কিউরভ্যাক।

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন- প্রতীকী ছবি

গত শুক্রবার নিজেদের তৈরি প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)। তারা জানিয়েছে, তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষার প্রথম ধাপ শুরু করেছে।

যুক্তারাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও ভ্যাকসিন তৈরির পথে অনেকটা এগিয়ে আছে জাপান। দেশটির জৈব প্রযুক্তি উদ্যোগ অ্যানজিসের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে তারা ১০ লাখ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে।

এদিকে ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের দাবি, তারা করোনার একটি ভ্যাকসিন ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে সফল হয়েছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাদের ভ্যাকসিনটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।