না ফেরার দেশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই আজ তার প্রয়াণ ঘটে বলে খবর দিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪০ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় সংক্রমণ থেকে মুক্ত হন তিনি। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছাড়তে পারেননি হাসপাতাল। বরং চেতনাহীন হয়ে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকতে হয় বেশ কিছু দিন। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গত কয়েক দিন থেকেই ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

তরুণ বয়সে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

বর্ষীয়ান এ অভিনেতার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গতকাল শনিবার রাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও গত ২৪ ঘণ্টায় সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। কোনো চিকিৎসাতেই তিনি আর সাড়া দিচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও ধীরে ধীরে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এখন অলৌকিক কিছুই পারে জনপ্রিয় এ অভিনেতাকে আবার সুস্থ করে তুলতে।

এদিন রাত ৯টার দিকে সৌমিত্রের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে সেখানকার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমের চিকিৎসক অরিন্দম কর। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসায় গঠিত ১৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ছিলেন। এই হাসপাতালটিতেই দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ অভিনেতা।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

এ সময় অরিন্দম কর জানান, সৌমিত্রের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এখন সবকিছু সৃষ্টিকর্তার হাতে। তারপর চিকিৎসকরা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অলৌকিক কিছুই পারে উনাকে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে। তাই সকলের উচিত সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করা।

তিনি আরো জানান, মাঝে কিছু দিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গ্লাসগো কোমো স্কেলের সূচকে (চেতনার স্তর) ৯-১০ এর মধ্যে থাকলেও গত শুক্রবার তা ৫ নেমে আসে। এই স্তর যখন ৩ এ নেমে আসে তখন চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় সৌমিত্রের এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

গত ৫ অক্টোবর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। এর একদিন পরই ৬ অক্টোবর তাকে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৪ অক্টোবর তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে হাসপাতালটির ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিটের (আইটিইউ) কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।

তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও ৮৫ বছর বয়সী এ অভিনেতা আগে থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ ছাড়া তার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বাধর্ক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।

এর মধ্যে সম্প্রতি সৌমিত্রের শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ দেখা দিলে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়াও দেন তিনি। গত বুধবার তার দুটি কিডনির ডায়ালাইসিস করা হয়। অস্ত্রোপচার করা হয় শ্বাসনালীতে। এর পরদিন বৃহস্পতিবার তাকে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়। এতে চিকিৎসকরা তার অবস্থার উন্নতি আশা করলেও তা হয়নি। বরং শুক্রবার তার শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি ঘটে। তারপর থেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি।