ইরানি শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদায়ের আগ-মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মদদে এটি ঘটানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। সেটা হলে ক্ষমতায় এসে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইনসেটে মোহসেন ফাখরিজাদেহ
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতায় ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। তার সে পরিকল্পনায় জটিলতা তৈরি করবে ইরানি বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনাটি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। যা উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন করে সংঘাত তৈরি করতে পারে।
ফাখরিজাদে হত্যায় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলি এক সাংবাদিকের একটি পোস্ট নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে রিটুইট করে এ কথা জানান তিনি।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও এ হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলের ‘বড় ধরনের সংযোগ’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডকে যুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা উল্লেখ করে বিদায়ের আগে ট্রাম্পের মদদে এ ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ করেছেন তিনি। একই ধরনের কথা বলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতার সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহগান, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি ও ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।
মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি এবং মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে। শীর্ষ এই পরমাণু বিশেষজ্ঞ হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বজ্রের মতো আঘাত হানার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানি শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। ওই হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত একাধিক মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ডজনে ডজনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাতে হতাহতের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা গোপন থাকেনি।
২০১৫ সালে ছয় জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া চুক্তিতে থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। ফের তেহরানের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। মার্কিন নির্বাচনের আগ-মুহূর্তেও এই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পরাজয়ের পর তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি। তবে সিনিয়র উপদেষ্টাদের বিরোধিতার মুখে তা থেকে বিরত হন।
ফাখরিজাদের গাড়ি ও ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা
সব কিছু মিলিয়ে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষমতা হারানোর আগ-মুহূর্তে বাইডেনকে চাপে ফেলতে শেষ সময়ে ইরান পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। এর ফলে বাইডেন প্রশাসনকে আগামী দিনগুলোতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
তারা বলছেন, বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত অ্যান্টনি ব্লিনকেন সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি করার আশার কথা বলেছিলেন। সেই সম্ভাবনাকে স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত করবে এই হত্যাকাণ্ড। তবে বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে ইরানের প্রতিশোধের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
ইরান যে কড়া পদক্ষেপ নিবে তার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) একটি সূত্র। এ ঘটনায় ইরানের শীর্ষ সুরক্ষা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র সামরিক কমান্ডাররা জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বলে জানায় আলজাজিরা।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী তেহরানের অদূরে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্দ শহরের একটি সড়কে ফাখরিজাদেকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।