আপনি পড়ছেন

রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ ২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মিরের কার্যত স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটানোর কয়েক সপ্তাহ পর আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। সেখানে দেশটির নাগরিকদের ক্ষোভ ছিল স্পষ্ট। এই অঞ্চলে ভারত সরকার কারফিউ জারির পর থেকে ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ডে কাঁটাতার ও ফোঁটা ফোঁটা রক্তের চিহ্ন ফুটে উঠছিল।

map kashmir 1পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন: ভারতীয় কাশ্মিরের সাফল্য

পাকিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির একটি সম্মেলনে কর্মকর্তা ও অন্য নাগরিকরা ভারতীয় কাশ্মিরের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন। একজন মানবাধিকার কর্মী আমাকে বলছিলেন, ‘এটি গাজা উপত্যকার মতো।’

তিন বছর পর নিজেই কাশ্মিরকে দেখার পর্যবেক্ষণের সুযোগ বের করলাম। পরিশেষে আমার পর্যবেক্ষণ হলো- পাকিস্তান সমস্যায় পড়েছে।

যদিও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মিরিরা একটি মৃতপ্রায় অর্থনীতিতে আটকে আছে, জামায়াত-ই-ইসলামির চরমপন্থার শিকার হচ্ছে; বিপরীতে ভারতের অধীন কাশ্মিরিরা নিরাপত্তা, স্বাধীনতার স্বাদ এবং উন্নতি লাভ করেছে।

পার্থক্যের এই লক্ষণ সবক্ষেত্রে আছে। পাকিস্তানিরা ভারতের এমন একটি অঞ্চলকে তুলে ধরে যেখানে বেসামরিক নাগরিকরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জোয়ালের নিচে আবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতা আসলে ভিন্ন। ভূখণ্ডের বাইরে ভারতীয় পুলিশ উপস্থিত রয়েছে, তবে তাদের চেকপয়েন্টগুলো মানবহীন এবং যানবাহন চলাচল করে।

ভারতের জরুরি অবস্থা শেষ হয়েছে এবং জীবন স্বাভাবিক রয়েছে। রাজধানী শ্রীনগর এবং পশ্চিমাঞ্চলে কোনো সক্রিয় চেকপয়েন্ট ছিল না। সেই জরুরি অবস্থা দক্ষিণ কাশ্মির পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, আগে যেখানে পাকিস্তান-প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা ব্যবসার কার্যক্রম ও জীবনকে থামিয়ে দিতে রাতকে কাজে লাগিয়েছিল।

কাশ্মিরের ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রমাণ এখন সর্বত্র। মানুষে ঠাসা আইনক্স মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের পাশ দিয়ে গিয়েছি আমি। এই আইনক্স মাল্টিপ্লেক্স ত্রিশ বছরের মধ্যে শ্রীনগরের প্রথম সিনেমা হল, যেখানে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি কাশ্মিরের পরিবারগুলোও সর্বশেষ সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে।

এটি এখন সহজ শোনাতে পারে। অথচ ১৯৯০ এর দশকে জঙ্গিরা বলিউড ভক্তদের হয়রানি এবং এমনকি হত্যা করেছিল। সতেরো বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে আমি দেখা করেছি, যাকে তার বাবা কারাতে শেখার অনুমতি দিয়েছে। বর্তমান সে একজন জাতীয় স্বর্ণপদক বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন। তার সহপাঠী এবং বন্ধুরা এখন তাদের পরিবারের কাছ থেকে একই স্বাধীনতা চায়। জঙ্গিবাদ পিছনে ঠেলে কাশ্মিরের ঐতিহ্যগত মধ্যপন্থা এবং এমনকি উদারতাবাদ আবারও প্রাধান্য পাচ্ছে।

সম্ভবত স্থানীয় মানুষের এই প্রত্যাশার সবচেয়ে বড় কারণ শিক্ষা ও বাণিজ্যের স্বাভাবিকীকরণ। প্রায় তিন দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিল। আজ কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্কুলগুলো কেবল ভালোভাবে চলছেই না, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট স্থানীয় কাশ্মিরিদের জন্য স্থানীয় শাখা খুলেছে।

জম্মু ও কাশ্মিরের ক্রমবর্ধমান সম্পদের মতো ব্যবসা কার্যক্রমও স্পষ্ট। পর্যটকদের বেশিরভাগই ভারতের। তবে ইউরোপ, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অনেকে ডাল লেক এবং এর বিখ্যাত হাউসবোট হোটেলগুলোতে ফিরেছেন।

কাশ্মিরে এখন ধর্মীয় স্বাধীনতাও ফিরেছে। শ্রীনগরে একজন হিন্দুর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম, যিনি জঙ্গিদের ভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সূফীবাদের ঐতিহ্য ফিরে এসেছে। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিরা সহিংসতা হুমকি আর তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারছে না।

মাইকেল রুবিন
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর