লবণ আমাদের শরীরের এক অত্যাবশ্যকীয় গাঠনিক উপাদান। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীন কর্মকাণ্ডকে সুচারু রূপে সম্পাদনের জন্য লবণের সোডিয়াম অংশটি অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু এটি মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণেই যত বিপত্তি।

more salt

প্রায় সবাই ভাবেন, এক-আধটু লবণ খেলে আর কী-ই বা হবে। স্বাদ বাড়াতে একটু তো খাওয়াই যায়। আদতে একটি ভুল ধারণার ওপর ভর করে আপনি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনছেন। এই অতিরিক্ত লবণ খাওয়াতেই হয়ত শরীরে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষয়রোগ। সাম্প্রতিক এক গবেষণা এমনটাই বলছে, অতিরিক্ত লবণ ক্ষয় রোগের সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় হাইপ্রেসারের দিকেও ঠেলে দেয়।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

  • অতিরিক্ত লবণ শরীরে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ বাড়ানো, হাড়কে দুর্বল করে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
  • লবণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল পানি ধরে রাখা। ফলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেশি হলে অতিরিক্ত পানি শরীরে জমে যায়। বেরোতে পারে না। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে, এই অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার মাধ্যমে লবণ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যা ক্ষতিকর। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও ব্রেইন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।
  • একজন সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কিডনী মূত্র তৈরির মাধ্যমে অনবরত বাড়তি লবণ শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু শিশুরা বিশেষত চার মাস পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী লবণ গ্রহণে করলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কেননা, শিশুদের কিডনী কর্মক্ষম হয়ে ওঠে না তখনও পর্যন্ত। তাই সর্তকতা প্রয়োজন, শিশুদের খাবারে কোনভাবেই যাতে লবণ বেশি না হয়। এই বাড়তি লবণ শরীরে জমে শিশুর কিডনী, লিভার এবং মস্কিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
  • হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়াম। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে মূত্রের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয় হয়ে অস্টিওপোরোসিস রোগ দেখা দেয়।
  • সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লবণ মস্তিষ্কের নিউরনকে প্রভাবিত করে। ফলে জ্ঞানসম্পর্কীয় ফাংশনগুলোতে প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে হার্টের ঝুঁকি বাড়ায়। পাকস্থলির ঘা এবং কোলন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে বাড়তি লবণ।

কী করে বুঝবেন অতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন কিনা

মাত্রারিক্ত লবণ খেলে বেশি বেশি পানির পিপাসা বোধ হয়। কারণ তখন শরীরের তরল স্তর অস্বাভাবিকভাবে হয়ে আপনকে তৃষ্ণার্ত করে তুলবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত লবণ খেলে কখনো কখনো হাত-পায়ে পানি জমে ফোলা ফোলা ভাব দেখা দেয়। উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম-এর কারণেই এটি হয়। এমন হওয়াটা কিডনি এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

লবণ বেশি খেলে লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে কম লবণযুক্ত খাবারের প্রতি অনীহা জাগে। এতেও বোঝা যায় আপনি অতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন। ঘন ঘন বদহজমের সমস্যাও দেখা দেবে। কারণ অতিরিক্ত লবণ পাকস্থলির স্বাস্থ্যকর ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করে ফেলে।

কিভাবে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমাবেন?

  • ভাতের বা ফল-মূলের সঙ্গে লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য লেবুর রস, ভিনেগার, কাঁচা রসুন ও মসলা ব্যবহার করাই ভাল।
  • ফ্রোজেন ফুড, টিনজাত স্যুপ, সবজি, মাংস-মাছ, প্রক্রিয়াজাত পনির ও মাংস, হিমায়িত খাবার, শুঁটকি মাছ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। এসবে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই কেনার সময় ভালো করে লেবেল পড়ে কিনুন। ফাস্টফুড, রেস্টুরেন্ট ও ক্যান্টিনের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে, এসব খাবার কম খান। খাবারের স্বাদ বাড়াতে কেচাপ, সয়াসস, সালাদ বানানোর উপকরণ, আচারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন।

দীর্ঘ রোগহীন জীবন আমাদের সকলেরই কাম্য। রান্নার ধরনে পরিবর্তন আনুন যাতে লবণ কম থাকে। সন্তানকে শৈশব থেকেই কম লবণযুক্ত খাবারে অভ্যস্ত করে তুলুন। নুন খেয়ে গুণ গাওয়া ভালো। তবে তা যেন ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

ডেঙ্গু জ্বরের সময় এখনই, জেনে নিন করণীয়

মানবদেহের ঘাতক সিলিকনযুক্ত ফ্রিজ

বর্ষায় ফ্লু থেকে বাঁচুন

পাটশাকের হাজারো উপকারিতা

ক্যান্সার রোধ করবে মসলা

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.