মাইন্ড এইড হাসপাতালে তালা, পরিচালক গ্রেপ্তার

রাজধানীর মাইন্ড এইড হাসপাতালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল এলাকা থেকে ডা. নিয়াজ মোর্শেদ নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক।

মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতাল

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে আজ বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে বিচারক শহিদুল ইসলাম প্রত্যেক আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে বিকালে আনিসুল করিম শিপনকে পিটিয়ে হত্যা করা সেই মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আহসানুল হক ও ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন। পরে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এএসপি আনিসুল করিম শিপন- ফাইল ছবি

রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হাসপাতালটির মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫), ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান (১৮), কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির (২৩), কিচেন শেফ মো. মাসুদ (৩৭), ওয়ার্ড বয় তানিফ মোল্লা (২০), জোবায়ের হোসেন (১৯), সঞ্জীব চৌধুরী (২০), সাইফুল ইসলাম পলাশ (৩৫), লিটন আহাম্মদ (১৮) ও অসীম চন্দ্র পাল (২৪)।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়কের ২৮১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালের একটি কক্ষে এএসপি আনিসুল হককে পিটিয়ে হত্যা করে হাসপাতালটির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ঘটনায় ওই দিনই আদাবর থানায় একটি মামলা হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা সাইজ্জুদ্দীন আহমেদ। মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হাসপাতালটির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

তিনি আরো জানান, এএসপি আনিসুল করিম শিপনের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল সোমবার বরিশাল থেকে গাজীপুরে যান। মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে ওইদিনই মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরো বলেন, আনিসুল করিম শিপন মৃত্যুর আগে ওই হাসপাতালতে বসে সকালের নাস্তা করেছেন। এসময় তার সঙ্গে তার বোন উম্মে সালমা ও পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। পরে নাস্তা করা শেষে আনিসুল ওয়াশরুমে যেতে চান। তখন হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় ও কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির ওয়াশরুমের কথা বলে তাকে দোতলায় নিয়ে যান। বোন উম্মে সালমা সঙ্গে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং দোতলায় যাওয়ার কলাপসিবল গেট আটকে দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, দোতলায় নিয়ে যাওয়ার পর আনিসুলকে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে মারধর করেন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আনিসুলকে মারতে মারতে দোতলার একটি কক্ষে ঢুকানো হয়। সেখানে কয়েকজন তাকে মেঝেতে ফেলে পিঠের ওপর হাটু দিয়ে চেপে ধরে। কয়েকজন তাতে ওড়না দিয়ে বেঁধে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে। এই আঘাতের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ডিসি জানান, আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে আনিসুল হকের বোনকে দোতলায় যাওয়ার জন্য খবর পাঠান মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়। তখন উম্মে সালামসহ পরিবারের সদস্যরা দোতলায় যান এবং আনিসুলকে একটি কক্ষের মেঝেতে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আনিসুলকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। দুপুর ১২টার ৫৮ মিনিটে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।