বিশেষজ্ঞদের দাবি, ঢাকায় ডেঙ্গু প্রকোপের মূলে পানি নিষ্কাশনের দুরবস্থা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুরবস্থাই ডেঙ্গু প্রকোপের অন্যতম প্রধান কারণ। রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তার ঘটে।

এডিস মশা, ফাইল ছবি

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম শরওয়ার বলেন, ‘ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা যায়। দুরবস্থাগ্রস্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে গ্রীষ্ম ও বর্ষা— উভয় মৌসুমেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে পারে না, ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর কারণ, শহরবাসীর সচেতনতার অভাব ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা।

অধ্যাপক শরওয়ার পরামর্শ দেন, দুই সিটি করপোরেশনের উচিত বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করা।

শহরবাসীরা বর্জ্য ফেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যা ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।

কীটতত্ত্ববিদরা সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

ডেঙ্গু মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এককভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করা অসম্ভব।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘সাধারণত এডিস মশা আবাসিক এলাকায় পাওয়া যায়। এডিস মশার প্রজননস্থল ঘরের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই থাকে।’

এডিস মশার জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে তিনি এটিকে একটি গৃহপালিত প্রজাতি হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, এর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অন্যান্য প্রজাতির মশার থেকে আলাদা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এডিস মশার প্রজনন প্রকৃতি ও জীবনচক্র বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ বাশার বলেন, কর্তৃপক্ষ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করায় দেশে ডেঙ্গু একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে আমাদের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশেষ করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে।’

তিনি বলেন, শহরবাসীকে স্থির পানি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, যা এডিস মশার প্রজননের প্রধান উৎস। এমনকি অল্প পরিমাণ পানিতেও এডিস মশা জন্মাতে পারে, যা এই মারাত্মক রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) দৈনিক বিবৃতি অনুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৫৪৫ জন এবং ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩,২১,১৭৯ জন এবং মারা যান ১,৭০৫ জন।