দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশের ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন অনুযায়ী, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৪ লাখ। তবে বেসরকারি হিসাবমতে এ সংখ্যা ৯০ লাখেরও বেশি। আর প্রতি বছর নতুন করে এ সংখ্যায় ১ লাখ রোগী যোগ হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশঙ্কা করছে, ২০৪৫ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অবস্থান করবে।

diabetes check

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, অন্ধত্বসহ আরো নানান রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে চিকিৎসাজনিত ব্যয় বাড়তেই থাকে। তাছাড়া রোগীর কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও।

ডব্লিউএইচও’র হিসাবে জানান যায়, ১৯৮০ সালে বিশ্বব্যাপী এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি, যা ২০০০ সালে বেড়ে ১৭ কোটিতে দাঁড়ায়। বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে। প্রতিবছর অগ্নাশয়জনিত এ রোগে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের ভাষ্য, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৮০ শতাংশই মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের মানুষ।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শুধু বাংলাদেশেই একজন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিমাসে চিকিৎসার পেছনে গুনতে হয় গড়ে ২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বছরে একজন রোগীর খরচ হয় ২৪ হাজার টাকা। আর ৯০ লাখ রোগীর ক্ষেত্রে এ খরচ দাঁড়ায় মাসে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, বছরে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। যা বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের মানুষের জন্য খুবই ব্যয়বহুল।

এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দীর্ঘমেয়াদী অসুখে সারাজীবন ঔষধ বা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় চিকিৎসাব্যয়ের কোন নির্দিষ্ট কোনো সীমা থাকে না। তাছাড়া এ রোগের কারণে কিডনি, চোখ, পা, দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনে থাকে। এতে দিন দিন খরচ বাড়তেই থাকে।

সারাদেশে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দাবি করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন,ডায়াবেটিসের খরচ জোগাতে মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।

আশঙ্কাজনক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আর প্রায় সবগুলো দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কার্যক্রমেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে না ডায়াবেটিস। ফলে দেশগুলোতে ডায়াবেটিস স্বাস্থ্য পরিচর্যামূলক কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে গড়ে ওঠেনি।

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের পাশাপাশি সবাইকেই শারীরিক নানান জটিলতা এড়াতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। শৈশব থেকে স্বাস্থ্যকর পরিকল্পনামাফিক জীবনযাপনে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে। তাই মুখরোচক ফাস্টফুড ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম করার উপদেশ দেন তারা। এজন্য পার্কে, ফুটপাতে হাঁটার স্থান রাখা, স্কুলগুলোতে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন তারা।

ডায়াবেটিস এর কিছু লক্ষণ:

১. প্রচুর তৃষ্ণা লাগা ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২. শরীরের ওজন আশংকাজনক হারে হ্রাস পাওয়া
৩. চুল পড়তে থাকা
৪. প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগা ও শারীরিক দুর্বলতা
৫. মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হওয়া

৬. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা
৭. চামড়া শুষ্ক, খসখসে হয়ে যাওয়া
৮. বারবার ইনফেকশন হয়ে নানান রোগে ভোগা

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.