ইশারা ভাষায় হাফেজ হচ্ছেন তারা!

বিশ্বের যে কোনো স্থানের হেফজ মাদরাসার চারদিকে প্রায় সব সময় গুনগুন শব্দ শোনা যেতে থাকে। কোরআন হেফজ যারা করে, তাদের দায়িত্ব- দিনের অধিকাংশ সময় এই গ্রন্থ পড়তে থাকা। ফলে হেফজ মাদরাসায় গুনগুন শব্দ একটি আবশ্যিক বিষয়ের মতোই। কিন্তু জাকার্তা শহরের উপকণ্ঠে থাকা দারুল আশুম মাদরাসাটি এর ব্যতিক্রম। খবর আরব নিউজ। 

ইশারা ভাষায় কোরআন পড়ে শোনাচ্ছে একটি বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছেলে

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল আশুম মাদরাসায় শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের পড়ার কোনো শব্দ পাওয়া যায় না। কারণ, সেখানকার শিক্ষার্থীরা সবাই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ফলে তাদের গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ ভেসে ওঠে না। নিরবেই তারা হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছে পবিত্র কোরআন।

দারুল আশুমে গেলে দেখা যায় অন্যরকম এক দৃশ্য। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত এই মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থীরা আরবি ইশারা ভাষার মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের পাঠ নেয় এবং হিফজ সম্পন্ন করে।

মেয়েরাও ইশারা ভাষায় মুখস্ত করছে পবিত্র কোরআন

মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আবু কাহফি বলেন, আমি এক সময় উপলব্ধি করলাম, পুরো ইন্দোনেশিয়ায় অসংখ্য বধির শিশু রয়েছে, যারা ইসলাম সম্পর্কে জানে না। বলতে গেলে তাদের জানার তেমন কোনো উপায়ও নেই। তখন অদৃশ্য এক চেতনাবোধ থেকে আমি এই বিশেষায়িত মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করি।

৪৮ বছর বয়সী আবু কাহফি জানান, বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১১৫ জন বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। তাদের বয়স সাত থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকেরই পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করার পথে। শ্রবণ-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কোরআন তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করতে শিখতে প্রায় পাঁচ বছর সময় নেয়।

প্রতিষ্ঠানটির ১০ বছর বয়সী ছাত্র মুহাম্মদ ফরহাদ জানায়, সে এরই মধ্যে কুরআনের ৩০ পারা মুখস্ত করে ফেলেছে। ভবিষ্যতের ইচ্ছা সম্পর্কে সে জানায়, ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে আছে তার, যাতে সে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে অন্যদের মধ্যে বিলাতে পারে।

আবু কাহফি আশা করেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইসলাম সম্পর্কে জানা সহজ করে তুলবে তার এ প্রতিষ্ঠানটি।

ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের প্রায় ২৭ হাজার মাদরাসায় প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে ইশারা ভাষার কোরআন হেফজ করার প্রতিষ্ঠান এই একটিই।