ইউক্রেন যুদ্ধের খড়্গ মিশরীয়দের পাতে

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছে গত সাড়ে চার মাস ধরে। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে এরইমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনীয় অনেক শহর-গ্রাম। হতাহত হয়েছে শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়ে শরণার্থীর জীবন বেছে নিয়েছে প্রায় এক কোটি ইউক্রেনীয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের খড়্গ মিশরীয়দের পাতে

যুদ্ধকবলিত একটি দেশের চিত্র এমনটিই হয়। একটি যুদ্ধে যে শুধু একটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা নয়; নানাভাবে যুদ্ধের প্রভাব পড়ে অন্যান্য অনেক দেশ, এমনকি পুরো বিশ্বের ওপরও। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধের খড়্গ পড়েছে মিশরীয়দের পাতে।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার গমের ওপর নির্ভরশীল মিশরে প্রথমে রুটির দাম বেড়েছে। এরপর গম সঙ্কটের কারণে রুটি লাপাত্তা হয়েছে। রুটির পথ ধরে খাদ্যপণ্য তো আছেই, এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি।

চরম মূল্যস্ফীতির কারণে দিশেহারা মিশরীয়রা। দিনকে দিনে পরিস্থিতি ভয়ানক হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে।

কায়রোর রাস্তায় ফল বিক্রি করেন হান্না আয়াদ। যে কোনো মুহূর্তে গিয়ে তার বাসার ফ্রিজ খুললেই দেখা যাবে, ড্রয়ারগুলো প্রায় খালিই। হান্না বলেন, ‘আমরা এখন মাংস না খেয়েই মাস পার করছি। আগের মতো মাসে মুরগী দুইবার-তিনবার কিনতে পারি না।’

পরিবারের সদস্যদের হান্না বলে দিয়েছেন, কমিয়ে কমিয়ে খেতে। কারণ, সবকিছুর যেমন দাম বাড়তি, তেমনি আয় রোজগারও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

হান্না বলেন, আগে যেসব মানুষ ৫-১০ কেজি করে ফল কিনতেন। এখন তারা কেনেন এক কেজি। আগে একদিনে যে ফল-ফলাদি বিক্রি করতেন, এখন তা বিক্রি করতে কয়েকদিন লেগে যায়।

হান্না মনে করেন, হু হু করে সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে মানুষের খাবারে কাঁটছাট করতে হচ্ছে। তার মতে, এমন পরিস্থিতি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি চরমে

মিশরের সরকারি হিসেবে, মূল্যস্ফীতি গত জুনে হয়েছে ১৪.৭ শতাংশ, যা আগের বছরের জুনে ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। ভোক্তারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে মিশরে সবকিছুর দাম আকাশচুম্বি।

মিশর দেশীয় চাহিদার ৮০ ভাগ গম ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করে থাকে। সেই দুই দেশের মধ্যেই যুদ্ধ হওয়ায় তাদের গম রপ্তানি বাধাগ্রস্ত। সে কারণে অন্যান্য দেশেরে মতো মি
শরেও গমের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। গত বছর দেশটিকে এক টন গমের জন্য দিতে হতো ২৭০ ডলারে, সেখানে এখন দাম ৪৩৫ ডলার।

যুদ্ধ মিশরের পর্যটনখাতেও কোপ ফেলেছে। প্রতিবছর বিশ্বের যত পর্যটক মিশরে আসতেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া ও ইউক্রেনের। এখন আর সেই সংখ্যক পর্যটক আসতে পারছেন না।

সব মিলিয়ে মিশরীয়রা এখন বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র: সিএনএন