লাওস যেন আরেক শ্রীলঙ্কা!

এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেকোনো সময় শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে আইএমএফ। এসব দেশেও বৈদেশিক ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০ বছরে শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ ঋণে জড়িয়ে পড়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে দেশটি বিদেশি ঋণখেলাপি হয়েছে। একই রকম পরিস্থিতির শিকার হতে চলেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস। খবর বিবিসি।

লাওস যেন আরেক শ্রীলঙ্কা!

লাওসে ৭৫ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। স্থলবেষ্টিত পূর্ব এশিয়ার দেশটি বেশ কয়েক মাস ধরে বৈদেশিক ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে তেলের দাম বৃদ্ধিতে দেশটি বেশ চাপে রয়েছে। খাদ্যের দাম আকাশচুম্বি। আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।

স্থানীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, লাওসে জ্বালানির জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কিছু পরিবার তাদের বিল পরিশোধ করতে অক্ষম। লাওসের মুদ্রা কিপের মান ডলারের বিপরীতে ভয়াবহ পতনের দিকে যাচ্ছে। এই বছর মার্কিন ডলারের তুলনায় কিপের মান এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ সুদের হার দেশটিতে ডলারকে শক্তিশালী করেছে, বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা দুর্বল অবস্থায় আছে। লাওসের বৈদেশিক ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে এবং আমদানি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে বা জ্বালানির মতো আমদানির অর্থ যোগাতে লড়াই করছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটির রিজার্ভ ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রেলপথের মতো বড় প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য লাওসকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়াকে লাওশিয়ান কর্মকর্তারা বলেন, বেইজিং গত বছরই ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ৮১৩টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

লাওসের পাবলিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২০২১ সালে তার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই ঋণের প্রায় অর্ধেক চীনের কাছে পাওনা। বিশেষজ্ঞরা বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

দেশটিতে লাও পিপলস রেভোলিউশনারি পার্টি ১৯৭৫ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, উচ্চ ঋণের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হবে। এই সতর্কতা শুধু শ্রীলঙ্কার জন্য নয়। কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলো চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের উন্নত অর্থনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।