আপনি পড়ছেন

রাশিয়ার নৌবাহিনীর নতুন একটি সাবমেরিন নিয়ে উদ্বেগ আর জল্পনা-কল্পনায় অস্থির পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা। বেলগোরোদ নামের পৃথিবীর দীর্ঘতম এ সাবমেরিন যে কোনো দেশের উপকূলকে কয়েক প্রজন্মের জন্য বসবাসের অনুপযোগী তেজষ্ক্রিয় নরকে রূপান্তর করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ এইচ আর সাটন। বেলগোরোদকে ‘প্রলয় দিবসের ডুবোজাহাজ (ডুমস ডে সাবমেরিন) অভিহিত করেছে ইউএস নেভাল ইনস্টিটিউট।

belgorod twsd বেলগোরোদকে ‘প্রলয় দিনের সাবমেরিন’ বলেছে ইউএস নেভাল ইনস্টিটিউট

বেলগোরোদ সাবমেরিনকে ‘গবেষণা-নৌযান’ বলেছে এর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যেবমার্শ শিপইয়ার্ড। কিন্তু অন্যরা মনে করছেন এ সাবমেরিন গোয়েন্দাগিরি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট নম্বর ০৯৮৫২ হচ্ছে একটি ‘স্পেশাল পারপাজ বোট’, কাজেই এ বিশেষ কাজের নৌযান বা পারমাণবিক সাবমেরিন বেলগোরোদ সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য তেমন কিছু নেই। রাশিয়ার নৌ বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ নিকোলাই এভমেনোভ বলেছেন, বেলগোরোদ সাবমেরিন সারা বিশ্বের সমুদ্রের সবচেয়ে দূর্গম জায়গাগুলোতে বহুমুখী ও বিচিত্র গবেষণার এবং উদ্ধার কাজ চালানোর সুযোগ তৈরি করবে।

কাগজে-কলমে বেলগোরোদের দৈর্ঘ্য ১৮৪ মিটার বা ৬০৮ ফুট, যদিও স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া কয়েকটি ছবিতে দৈর্ঘ্য আরও বেশি মনে হয়েছে। এর প্রস্থ প্রায় ৬০ ফুট। আন্ডারওয়াটার ডিসপ্লেসমেন্ট ৩০ হাজার টন। সাবমেরিনে সংযুক্ত দুটি ওয়াটার-কুলড পারমাণবিক চুল্লির শক্তি ৩৮০ থার্মাল মেগাওয়াট।

বেলগোরোদের যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোতে সচেতনভাবেই প্রপেলার ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সাবমেরিনটি গভীর সমুদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচলে সক্ষম একাধিক হ্যালিবাট টাইপ ভেহিকল বহন করবে বলে জানা গেছে।

গবেষণার মতো নিরীহ কাজের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি সাবমেরিনকে ঘিরে এত আতঙ্কজনক কথা হবে কেন, সে প্রশ্ন আসতেই পারে। উত্তর হলো, বেলগোরোদ নিজেই। এটা সত্যি যে বেলগোরোদে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে এমনভাবে যাতে বিজ্ঞান-সংক্রান্ত বেশকিছু জিজ্ঞাসা নিয়ে কাজ করা যায় এবং দুর্যোগকালে উদ্ধার কার্যক্রমে ভূমিকা রাখা যায়। কিন্তু এ সাবমেরিনেই সংযোজন করা হচ্ছে এ যাবতকালের সবচেয়ে অভিনব থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র পসিডন।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া- উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, প্রতিটি পসিডন টর্পেডো ১০০ মেগাটন পরিমাণ পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যা আক্রান্ত এলাকায় এমন তেজষ্ক্রিয় তরঙ্গমালা তৈরি করবে যে দশকের পর দশক সেখানে বসবাসের উপায় থাকবে না। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের ভাষায়, পসিডন হচ্ছে ‘সম্ভবত অপ্রতিরোধ্য।’

ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতিসম্পন্ন পসিডন টর্পেডো শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পানির নিচ দিয়েও পথ ও গতি পাল্টাতে পারবে এবং এক হাজার মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। সমুদ্রবক্ষে পসিডনের আঘাতে সৃষ্ট পারমাণবিক সুনামির ঢেউ একশো মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে এবং পশ্চিমা শহরগুলোকে ডুবিয়ে দিতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ এলি ড্রোর।

পসিডনকে ‘একেবারেই নতুন ধরণের অস্ত্র’ বলেছেন একজন বিশেষজ্ঞ। বেলগোরোদ সাবমেরিন ও তাতে থাকা পসিডন টর্পেডো আগামী দিনগুলোতে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর নৌ যুদ্ধ ও রণকৌশলের দিগন্তটাই পাল্টে দেবে বলে মনে করছেন অনেকে।

বেলগোরোদ সাবমেরিনে থাকবে আটটি পসিডন। রুশ সাময়িকী ন্যাকেড সায়েন্সের তথ্য মতে, ৬৪ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি ব্যাসের প্রতিটি পসিডনে থাকছে অন-বোর্ড নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর। খুব সম্ভবত লেড-বিসমুথ অথবা সোডিয়াম-পটাসিয়াম রিঅ্যাক্টর সংযোজন করা হবে।

নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের এক কিলোমিটার অথবা তারও বেশি গভীরে যত ইচ্ছা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে পসিডন। পারমাণবিক ওয়ারহেডবাহী পসিডনের চলার পথের গভীরতার কারণে প্রতিপক্ষের সোনার মেশিনও তার উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে না। ধীর ও দ্রুত- দুই মোডেই চলতে পারবে পসিডন।

পসিডন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে ২০২০ সালে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র বিস্তার রোধ) ক্রিস্টোফার এ ফোর্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় শহরগুলোকে তেজষ্ক্রিয় সুনামিতে নিমজ্জিত করতে রাশিয়া পসিডন তৈরি করছে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে মার্কিন কংগ্রেসের গবেষণা শাখার (সিআরএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যাঘাতমূলক অস্ত্র হিসেবে পসিডন তৈরি করছে রাশিয়া। কোনো কারণে পারমাণবিক হামলার শিকার হলে পাল্টা জবাব দিতে পসিডন ছুঁড়বে দেশটি।

সিআরএস বলেছে, বেলগোরোদসহ চারটি সাবমেরিনে পসিডন সংযোজন করবে রাশিয়া। এর মধ্যে দুটি সাবমেরিন রুশ নৌবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় বহরে ও দুটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরে থাকবে।

২০১৯ সালে বেলগোরোদ সমুদ্রে নামানো হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাবমেরিনটি ২০২০ সালে রুশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবসহ নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে চলতি মাসের ৮ তারিখ বেলগোরোদ রুশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বর্তমানে শ্বেত সাগরে অবস্থানরত বেলগোরোদ সাবমেরিন কিছুদিন রুশ নৌবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরে থাকবে। পরবর্তীতে একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।বেলগোরোদের উপস্থিতি গভীর সমুদ্রে স্নায়ুযুদ্ধকালীন উত্তেজনা ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করেন সাটন।

বেলগোরোদ ও পসিডনের মেলবন্ধন আগামী দিনে সামুদ্রিক যুদ্ধকৌশল ও পরিকল্পনার ধরণটাই পাল্টে দেবে। পসিডন নিরব, অতি দ্রুত অবস্থান পাল্টাতে সক্ষম এবং ত্রুটিহীন বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, প্রথাগত ওয়ারহেড সংযোজন করলে পসিডনকে যে কোনো বিমানবাহী রণতরী ও উপকূলীয় দূর্গ, অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট প্রথাগত ওয়ারহেডের কথা বলেছেন। কিন্তু পসিডনে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংযোজন করলে কি হবে সেটা তিনি না বললেও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলতে ভুলেননি। রাশিয়ার ওপর পারমাণবিক আক্রমণ হলেই পসিডন ছুঁড়বে বেলগোরোদ। শত্রুপক্ষের উপকূলীয় এলাকাগুলো মূহূর্তেই তেজষ্ক্রিয় নরকে রূপান্তরিত হবে। সেক্ষেত্রে বেলগোরোদকে নির্দ্বিধায় ‘প্রলয় দিনের সাবমেরিন’ বলতে হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.