বিক্ষোভকারীদের দখলে ইরাকের পার্লামেন্ট

কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কায় দেখা গিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখল করে সুইমিং পুল ব্যবহার করছে, প্রেসিডেন্টের বেডরুমে ঘুমাচ্ছে, কিচেনে রান্না করছে। এবার এমনই দৃশ্য দেখা গেছে ইরাকে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন দখল করে নেয়। পরে তাদেরকে এমপি-মন্ত্রীদের আসনে বসে সিগারেট টানতে, সেলফি তুলতে দেখা গেছে। খবর আল জাজিরা।

ইরাকে পার্লামেন্ট ভবনে বিক্ষোভকারীরা

খবরে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যুহ ভেদ করে গ্রিন জোনে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকের প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়নের প্রতিবাদ জানাতে শত শত বিক্ষোভকারী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই ইরাকের শিয়া মতাবলম্বী নেতা মুকতাদা আল সদরের অনুসারী। ঘটনার সময় পার্লামেন্টে কোনো এমপি-মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না।

গতকাল বুধবার যখন বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন ও কূটনৈতিক মিশনের আবাসস্থল রাজধানীর উচ্চ-নিরাপত্তা গ্রিন জোনে প্রবেশ করে তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদেরকে সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর আগে অবশ্য দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাড়াতে জল কামান ব্যবহার করে এবং তাদের সামনে ব্যারিয়ার বসায়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সেসব উপেক্ষা করেই ভেতরে ঢুকে যায়। তারা ‘আল-সুদানী, আউট’ বলে স্লোগান দেয়।

মুকতাদা আল সদর

উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরে ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ৩২৯ আসনের মধ্যে মুকতাদা আল সদরের ব্লক বিজয়ী হয় ৭৩ আসনে। এর মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে তারা সবচেয়ে বড় অংশ হয়ে ওঠেন। তবে এরপর নতুন সরকার গঠনের আলোচনা থমকে যায় এবং আল-সদর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন।

এ অবস্থায় বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিকে। তাকে ইরানপন্থি সমন্বয়ক ফ্রেমওয়ার্কের সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মনোনয়নের বিরুদ্ধেই মাঠে নেমেছে আল সদর সমর্থকরা। তারা মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির প্রার্থিতার বিরোধিতা করে।

আল জাজিরার সংবাদদাতা আবদুল ওয়াহেদ বাগদাদ থেকে রিপোর্টে জানান, ইরাকের বিভিন্ন শহর থেকে আসা বিক্ষোভকারীরা দাবি করে, দেশটি বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছে। তারা এর শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে। তাদের অবস্থান দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।

এদিকে, পার্লামেন্ট দখল করার কয়েক ঘণ্টা পরে আল সদর টুইটারে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, তোমাদের বার্তা গৃহীত হয়েছে। সুতরাং নিরাপদে বাড়িতে ফিরে যাও। এর কিছুক্ষণ পরই নিরাপত্তা বাহিনীর তদারকিতে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন।

ওয়াশিংটনের আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের ইয়েরেভান সাঈদ আল জাজিরাকে বলেন, গতকাল বুধবারের বিক্ষোভ দ্বারা আল সদর তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেখাতে চেয়েছিলেন, তিনি এখনও ‘রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক’। সুতরাং তাকে উপেক্ষা করে কিছু করা ঠিক হবে না।