ডিম-মুরগিতেই লোপাট ৫০০ কোটি টাকা!

ডিমকে বলা হয় গরীবের পুষ্টি। যারা বড় বড় মাছ, মাংসের নানা পদ জোটাতে পারেন না, ডিমই তাদের ভরসা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সেই ডিমেরই দাম চড়ে হয় আকাশচুম্বী। মাত্র দুই সপ্তাহে ফার্মের ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

ডিম ও মুরগি

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।

চলতি মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় ডিমের দাম বেড়ে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৬০-১৭০ টাকায় ওঠে। এ যাবৎকালে ডিমের সর্বোচ্চ দাম এটি। এ অবস্থায় গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাম কমানোর স্বার্থে প্রয়োজনে ডিম আমদানির হুমকি দেন। এরপর একদিনের মাথায় ডিমের দাম হালিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমে যায়। সর্বশেষ প্রতি ডজন ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় এ দামও অনেক বেশি।

এরইমধ্যে শনিবার দেশের ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে, ডিম ও মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করেছে। এ খাতে অস্থিরতা তৈরি করে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তাদের অভিযোগের তীর দেশের ১০-১২টি করপোরেট কোম্পানির বিরুদ্ধে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, একটি মাফিয়া চক্র চলতি মাসের ১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চক্রটি অতি মুনাফার লোভে সুপরিকল্পিতভাবে ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

দেশের প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের সংগঠনটির সভাপতির অভিযোগ, দেশের পোলট্রি খাত চলে গেছে মাফিয়া চক্রের হাতে। কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, নারিশ, ৭১, আফিল, সাগুনাসহ ১০-১২টি করপোরেট কোম্পানি মিলে এ চক্র গড়ে তুলেছে। সারা দেশে প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করতে চায় চক্রটি। তাদের চক্রান্তে দেশের প্রায় অর্ধেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এখনো টিকে আছে, তারা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও দাম নির্ধারণের যেন তাদের এখতিয়ার নেই। দাম নির্ধারণ করে দেয় বড় কোম্পানিগুলো।

যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে ডিম ও মুরগি মজুদ থাকে, তখন তারা দাম বাড়াতে চায় না। আবার কোনো কারণে দাম কমে এলে করপোরেট কোম্পানিগুলো বাজারে ডিম ও মুরগি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তখন বাজারে ঘাটতি তৈরি করে দাম বাড়িয়ে নেয় তারা। বর্তমানে দেশে ডিম ও মুরগির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এটি বড় কোম্পানিগুলো জেনেশুনে করছে বলে অভিযোগ করেন সুমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা সাড়ে চার কোটি পিস। এর মধ্যে বড় কোম্পানিগুলো জোগান দেয় আড়াই কোটি। প্রতি ডিমে ৩ টাকা করে বেশি নিয়ে প্রতিদিন ৭ কোটিরও বেশি টাকা তারা অবৈধভাবে লাভ করেছে। এভাবে গত ১৫ দিনে বড় কোম্পানিগুলো ডিমের বাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। এভাবে প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি চাহিদার মজুদ সংকট তৈরি করে। এরপর প্রতি কেজিতে বাড়তি নিয়েছে ১৫ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৫ দিনে ১৭২ কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বড় কোম্পানিগুলো।

সংগঠনটির সভাপতি আরো বলেন, বড় কোম্পানিগুলো প্রতিদিন ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করে প্রতিটিতে বাড়তি লাভ করছে ২০-২২ টাকা। তারা প্রতিদিন ১ কোটি ৩০ লাখ বাচ্চা বিক্রি থেকে গড়ে ১২৯ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে। এর মাধ্যমে গত ১৫ দিনে ২৩৪ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে তারা।

সুমন বলেন, মুরগি ও ডিমের দাম আড়তে নির্ধারণ হয় না। সারা দেশে আড়তগুলোতে বড় কোম্পানির লোকজন থাকে। বড় কোম্পানিগুলো যে দাম নির্ধারণ করতে বলে, আড়তগুলোও সেই দামই নির্ধারণ করে দেয়। এ প্রক্রিয়া দেশের ভোক্তাদের জন্য শুভ নয়। এতে প্রান্তিক খামারিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দেবসহ অন্যান্য নেতারা।