ইউরোপে ৫০০ বছরের তীব্রতম খরা, বিপর্যস্ত চীনও

তীব্র খরায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ইউরোপে। মহাদেশের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় কৃষিজমি শুকিয়ে যাচ্ছে, কমেছে নদীর নাব্যতা। ফসল ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয়ের পাশাপাশি সংকট দেখা দিয়েছে রাইনসহ কয়েকটি নদীতে নৌ চলাচলে। একই অবস্থা চীনে। পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম নদী ইয়াংজিতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সেচ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চীনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো। বেশ কয়েকটি নৌ রুট ছাড়াও বন্ধ হয়েছে টয়োটা, ফক্সকন, টেসলার উৎপাদন।

দুই পাশে পাহাড়ের গায়ে দাগ দেখে বুঝা যায় ইয়াংজিতে পানির স্তর কতটা নেমেছে

চীনের আবহাওয়া অধিদপ্তর সেদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনাবৃষ্টি, দাবদাহ ও খরা পরিস্থিতি সেপ্টেম্বর মাসেও অব্যাহত থাকবে জানিয়ে চলতি সপ্তাহে দেশজুড়ে খরা-সতর্কতা জারি করেছে। খরার কারণে এশিয়ার দীর্ঘতম নদী ইয়াংজির পানি কমে যাওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে তুওতুয়ো, তংতিয়ান, জিনশা, চুয়ানজিয়াং, জিয়াজিং, জিংজিয়াং, জুনিয়াংসহ কয়েক ডজন শাখা নদী। হুমকির মুখে পড়েছে উহান, জিনজিয়াং, সাংহাই, হুবেই, সিচুয়ানের অন্তত ৪০ কোটি মানুষের পানীয় জলের উৎস।

জলবিদ্যুতের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল চীনে সিচুয়ানসহ কয়েকটি প্রদেশে বিদ্যুৎ বিতরণে রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে সিচুয়ান ও হুবেই প্রদেশে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে বড়-ছোট কয়েক হাজার কোম্পানি। নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ইয়ুশু, লিঝিয়ান, পেনজিনহুয়া, চংকিং, উহু, নানজিংসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের নৌ রুট। চীনে নৌ চলাচলের বিপর্যয় বৈশি^ক সরবরাহ চেইনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

খরার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সিচুয়ান, হেবেই, হুনান, আনহুই, জিয়ানজি ও চংকিংয়ের ২২ লাখ হেক্টর কৃষিজমির ফসল। বিশেষত ধান ও সয়ার মতো জলঘন আবাদের এ মৌসুমে খরার প্রকোপ লোকসানের মুখে ফেলবে কয়েক কোটি কৃষককে। চলতি খরাকে ইতিহাসের ভয়াবহতম বলে অভিহিত করেছেন কর্মকর্তারা।

পানির স্তর নেমে যাওয়ায় চংকিং শহরের কাছে নদীর বুকে ভেসে উঠেছে ৬০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধমুর্তি। ইয়াংজির মতো শুকিয়ে যাচ্ছে রাইন, লোই, দানিয়ুবসহ ইউরোপের কয়েকটি বড় নদী। যুক্তরাষ্ট্রে একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কলোরাডো নদী। নাব্যতা সংকটের কারণে রাইনের বুকে জাহাজ জট সৃষ্টি হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে।

ইউরোপে ৫০০ বছরের তীব্রতম খরা চলছে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ড্রট অবজারভেটরি (ইডিও)। ইউরোপিয়ান কমিশনের আওতাধীন সংস্থাটি বলেছে, মাটির আর্দ্যতা কমে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে ইউরোপের ৪৭ শতাংশ জমি। আর ১৭ শতাংশ জমিতে এরইমধ্যে ফলনে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ইডিওর চলতি মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শুরু থেকে ইউরোপের অনেক অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব রাখা তীব্র খরা আগস্টের শুরু থেকে আরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। খরা পরিস্থিতির অবনতির কারণে স্পেন, পর্তুগাল, গ্রিস, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। দাবদাহে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বিপূল সংখ্যক মানুষ।

চলতি রবি মৌসুমে ইউরোপে ভুট্টা উৎপাদন বিগত পাঁচ বছরের গড়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে সয়াবিন ও সূর্যমুখী উৎপাদন কমবে যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। কৃষি ফলনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বড় ব্যাঘাত ঘটছে। নদী ও জলাধারের পানি কমায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন তো কমছেই, পানি সংকটের কারণে কুলিং সিস্টেম চালাতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন।