ইউক্রেনে যেই জিতুক না কেন, হেরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের যুদ্ধে কোনো এক পক্ষ জিতবে অথবা যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে থেমে যাবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাত, কিন্তু এরই মধ্যে কৌশলগতভাবে হেরে গেছে আমেরিকা। কূটনীতি, অর্থনীতিসহ সবদিক দিয়েই দিন দিন আরো নিচের দিকে যাচ্ছে দেশটি। মার্কিন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক দ্বিমাসিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ এক রিপোর্টে এমন মন্তব্য করেছে।
ছয় মাস ধরে ইউক্রেনে চলছে যুদ্ধ
রিপোর্টে তুলে ধরা হয়, বেশ কিছু দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত হারছে। অথচ যুদ্ধ চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে রয়েছে কূটনীতির বিষয়টি। বাণিজ্যের সুবাদে রাশিয়া এরই মধ্যে চীন, ভারত, ইরান, সৌদি আরব, উপসাগরীয় দেশ এবং ইউরেশীয় মহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ক্রমশ তারা ইউরোপীয় গণতন্ত্র এবং ওয়াশিংটন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে খর্ব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব।
আবার চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কো যেহেতু দেখছে তারা ইউরোপকে তার শীর্ষ জ্বালানি গ্রাহক হিসাবে রাখতে পারবে না, তখন তারা জ্বালানি বিক্রয়ের জন্য এশিয়া বিশেষ করে চীন ও ভারতের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আগে যেখানে চীন সবচেয়ে বেশি তেল কিনত সৌদি আরব থেকে, সে জায়গা এখন দখল করেছে রাশিয়া, বিষয়টি মার্কিন মিত্র সৌদি আরবের জন্য মেনে নেয়া কিছুটা কষ্টকর।
যুদ্ধে যেই জিতুক না কেন, হারছে যুক্তরাষ্ট্র
আবার যে ভারত রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেমন কিনতই না, তারা এখন রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ গ্রাহক হয়ে উঠেছে। ভারত এখন রাশিয়া থেকে প্রতিদিন সাত লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করছে। আবার এসব লেনদেনে ডলার ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা না থাকায় উভয় পক্ষের জন্যই তা সুবিধাজনক প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এখানেও কর্তৃত্ব হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম স্মরণকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন রাশিয়ার দেওয়া বিশেষ সুবিধায় তেল কিনতে পারায় মস্কোর সাথে বেইজিং ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট হবে। ফলে রাশিয়া-চীন-ভারতের নতুন একটি বলয় তৈরি হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেরই কাম্য নয়।
এ যুদ্ধকে সামনে রেখে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র যতটা সহজে সবাইকে নিজেদের পক্ষাবলম্বন করাতে পারবে বলে ধারণা করেছিল, বিষয়টি তত সহজ হচ্ছে না। কারণ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার প্রতি চীনের অব্যাহত সমর্থন মার্কিন পরিকল্পনাগুলো ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। আবার সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পেশ করা হলে, তাতেও ৩৪টি দেশ রাশিয়ার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। এমনকি প্রতিবেশী মেক্সিকো রাশিয়ার নিন্দা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে অস্বীকার করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার একেবারে বাইরে ছিল।
এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টিতে প্রশ্নের মুখে পড়ছে, সেটি হচ্ছে অন্য দেশকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান ও পালনে বাধ্য করার বিষয়টি। কারণ ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকার পরও কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কথা বা চাপেই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়। এতে তারা যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়ে, অর্থের হিসেবে তা বিশাল।
লড়াই যত দীর্ঘ হয়েছে এ ক্ষতির পরিমাণও তত লম্বা হয়েছে। এদিকে আসন্ন শীতে কীভাবে জ্বালানি চাহিদা সামাল দেবে তা নিয়ে ইউরোপের সব দেশই কমবেশি চিন্তিত। ফলে ইউরোপ এখনই রাশিয়ার সাথে কোনো সমঝোতায় আসা যায় কি না তার পথ খুঁজছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এখানে যথেষ্টই খর্ব হবে।
আবার নিজে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করেও ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তার প্রভাবও পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে। ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ৫৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিয়েছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের অবদান মাত্র ২.৫ বিলিয়ন, এর পরে আছে পোল্যান্ড ১.৬২ বিলিয়ন ও জার্মানি ১.৪৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে কিয়েভকে।
ইরাক বা সিরিয়া থেকে যে পদ্ধতিতে ব্যয়ের অর্থ তোলা হয়েছে, ইউক্রেন বা রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। ফলে উদার হয়ে কিয়েভকে যে সহায়তা করা হচ্ছে, তার দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু লাভবান হচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠছে অভ্যন্তরীণভাবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.