আপনি পড়ছেন

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রধান নেতা এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯১ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘ চার দশক ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে তার সময়েই। খবর বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।

mikhail gorbachev 1মিখাইল গর্বাচেভ

পূর্বসূরী কনস্তান্তিন চেরনেনকোর মৃত্যুর পর ১৯৮৫ সালে মিখাইল সের্গেইভিচ গর্বাচেভ ক্ষমতায় আসেন এবং দেশটির প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েতের ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির দিন তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিশ্বে চার দশক ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি হয়। তিনি পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্ত নীতির প্রবর্তক ছিলেন।

সাত বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় থাকাকালীন গর্বাচেভ বিশ্বে এক শ্বাসরুদ্ধকর ধারাবাহিক পরিবর্তন আনেন। কিন্তু তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন রোধ করতে পারেননি, যেখান থেকে আধুনিক রাশিয়ার উদ্ভব হয়েছিল। একই সময় রাশিয়ার আধিপত্য থেকে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে এবং কয়েক দশকের পূর্ব-পশ্চিম পারমাণবিক সংঘর্ষের অবসান ঘটে। 

ronald reagan and mikhail gorbachevএক চুক্তিতে সই করছেন মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান

সোভিয়েত ইউনিয়নকে একত্রে রাখার জন্য ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করার চিন্তা করেননি গর্বাচেভ। কারণ তার আশঙ্কা ছিল, এর ফলে দেশে গৃহযুদ্ধ ও পারমাণবিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, পুরো দেশ অস্ত্রে ভরা এবং এটি অবিলম্বে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

তাঁর শাসনের শেষের দিকে যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা থামাতে তিনি ব্যর্থ ছিলেন, তারপরও বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অন্য যে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী ছিলেন। ১৯৯২ সালে এক সাক্ষাৎকারে দ্য এপিকে নিজের ব্যপারে বলেন, আমি নিজেকে একজন মানুষ হিসাবে দেখি যিনি নিজ দেশ, ইউরোপসহ পুরো বিশ্বের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শুরু করেছিলেন।

তার গ্লাসনস্ত নীতি মানুষকে এমনভাবে সরকারের সমালোচনা করার অনুমতি দেয়, যা আগে অচিন্তনীয় ছিল। কিন্তু এটি দেশের অনেক অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী মনোভাবও প্রকাশ করে যা শেষপর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে পতনের দিকে নিয়ে যায়।

প্রাচ্য-পশ্চিম সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা পালন করে শীতল যুদ্ধের অবসানে ভূমিকার জন্য ১৯৯০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন গর্বাচেভ। সে সময় তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিলেন। তবে নিজ দেশে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। রাশিয়ানরা তাকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির জন্য দায়ী করে। কারণ এক সময়ের পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সময়েই ১৫টি দেশে বিভক্ত হয়েছিল। সে সময় তার মিত্ররাও তাকে ত্যাগ করে চলে যান এবং দেশের সব সমস্যার জন্য তাকেই দায়ী করেন।

১৯৯৬ সালে আবারও রাজনীতির মাঠে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন গর্বাচেভ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু ১ শতাংশ ভোটও পাননি।

মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মিখাইল গর্বাচেভ একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গর্বাচেভের মৃত্যুর পর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডারলেইন গর্বাচেভকে একজন বিশ্বস্ত ও সম্মানিত নেতা হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, তিনি মুক্ত ইউরোপের পথ খুলে দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গর্বাচেভের সাহস ও সততার প্রশংসা করে বলেন, ইউক্রেনে পুতিনের আগ্রাসনের এই সময়ে, সোভিয়েত সমাজকে উন্মুক্ত করার জন্য তার অক্লান্ত প্রতিশ্রুতি আমাদের সবার কাছে একটি উদাহরণ হয়ে আছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.