বৈরুত থেকে আসা ফোনকলে থামে ইরাকের সংঘাত
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি সপ্তাহে ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া রাজনীতিক ও ধর্মগুরু মুকতাদা আল-সদরের সমর্থকদের সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও ইরানপন্থী পপুলার মোবিলাইজেশন ফ্রন্টের ত্রিমুখী সংঘাত থেমেছিল বৈরুত থেকে আসা একটি ফোনকলের সুবাদে। লেবাননি রাজনৈতিক সংগঠন হেজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর অনুরোধেই ইরাক গৃহযুদ্ধ এড়াতে পেরেছে। বৈরুত ও বাগদাদের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর সঙ্গে মুকতাদা আল-সদর
লেবাননের দৈনিক আল-আখবার জানিয়েছে, সোম ও মঙ্গলবার ধরে চলা সংঘর্ষে ইরাক প্রায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেদেশের তিনটি বিমানবন্দর অবরোধের পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের বাসভবন, পার্লামেন্ট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেশ কয়েকটি শহরে গভর্নরের কার্যালয়ের দখল নিয়েছিল সদরপন্থীরা।
ইরাকের সরকার ও প্রশাসন ব্যবস্থা যখন ভেঙে পড়ার উপক্রম ঠিক সে মুহূর্তে মঙ্গলবার বিকেলে আকষ্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের সমর্থকদের এক ঘণ্টার মধ্যে সব সরকারি ভবন ছাড়ার ও সংঘাত থামানোর নির্দেশ দেন মুকতাদা আল-সদর। এরপর নাটকীয়ভাবে থেমে যায় সবকিছু। সদর সমর্থকরা বাগদাদের গ্রিন জোন ও অন্যান্য সংরক্ষিত এলাকা থেকে বেরিয়ে আসে। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নিজেদের তাণ্ডবে রাস্তাঘাটে জমে ওঠা আবর্জনা, ব্যারিকেড, পোড়া টায়ার, যানবাহন ইত্যাদি তারাই সরিয়ে নিতে থাকে।
ইরাকে দৃশ্যপটের এমন আকষ্মিক রূপান্তরে নেপথ্যে থেকে মূল ভূমিকা রাখেন নাসরাল্লাহ। তিনি মুকতাদা সদরকে মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ইরাকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অনুরোধ করেন। এ সময় তিনি সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের আশঙ্কা, সিরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের উপর্যুপরি হুমকি ও মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক সমীকরণের কথা উল্লেখ করেন।
বৈরুত ও বাগদাদের একাধিক সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, নাসরাল্লাহর সঙ্গে ফোনালাপের পরপর মুকতাদা সদর সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ইরাকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত থামানোর নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি নিজের সমর্থকদের কড়া সমালোচনার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ ইরানপন্থী আসহাব আল-শাহাব গেরিলাদের সংযমের প্রশংসা করেন। সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা কাজিমীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মুকতাদার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং দেশজুড়ে চলা কারফিউ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে মুকতাদা সদর সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে চিরতরে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি শিয়া মতাবলম্বী ধর্মতাত্ত্বিকদের পরম্পরা মারজা’র কোনো পদে থাকবেন না বলেও জানান। সদরের এ ঘোষণার পরপর বাগদাদ, নাজাফসহ বিভিন্ন শহরে অসংখ্য মসজিদের লাউড স্পিকার থেকে সমর্থকদের পথে নামার আহ্বান জানানো হয় এবং ইরাকজুড়ে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত শুরু হয়।
জানা গেছে, মুকতাদার রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানপন্থী ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ কাজিম আল-হাইরি অপ্রত্যাশিতভাবে মারজার দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি নিজের অনুসারীদের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে অনুসরণের নির্দেশনা দেন। ৮৪ বছর বয়সী হাইরি তার ভাবশিষ্য মুকতাদার সমালোচনা করেন এবং মুকতাদার মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা নেই বলে মন্তব্য করেন।
কাজিম আল-হাইরির আকষ্মিক ঘোষণায় মুকতাদা ভীষণ হতাশ হন এবং রাজনীতি ও মারজা থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘদিন ইরানে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকলেও ইরান সরকারের সঙ্গে মুকতাদার কখনও খুব মাখামাখির সম্পর্ক ছিল না। দেশের ভেতরেও তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইরানপন্থী দলগুলো। কাজিম আল-হাইরি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়ায় মুকতাদার মনে সন্দেহ হয়, ইরান সরকারের চাপেই হয়তো তার গুরু এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ইরানকে ঘিরে মুকতাদার ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে নাসরাল্লাহর সঙ্গে ফোনালাপের পর। হেজবুল্লাহ নেতা তাকে এ মর্মে বুঝাতে সমর্থ হন যে, কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর পর ইরান সরকার ইসরায়েল-বিরোধী কুদস ফোর্সের সমন্বয়ের দায়িত্ব অনেকটাই বিকেন্দ্রীকরণ করেছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইরাকে কুদস ফোর্সের অঙ্গ সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করছে। এ অবস্থায় ইরানের প্রতি বৈরীভাব পোষণের চেয়ে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমেই বিরোধ মিমাংসার পথ খুঁজতে হবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.