জাতিসংঘ: তিন সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম ইরান

যে পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে ইরান তিন সপ্তাহের মধ্যে বোমা তৈরি করতে সক্ষম। গতকাল বুধবার জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইরানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এ মন্তব্য করেছে। সেই সাথে তারা এও বলেছে, তেহরানের এই পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খবর আলজাজিরা ও আরব নিউজ।

রাফায়েল গ্রোসি

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) তিনটি অঘোষিত সাইটে পারমাণবিক উপাদানের উপস্থিতির বিষয়ে ইরানের কাছে উত্তর দাবি করছে। এ তিনটি স্থানে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে মনে হচ্ছে সে সম্পর্কে ইরানের কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ায় সংস্থাটি বলছে, তারা এ গ্যারান্টি দিতে পারে না যে, পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম চুরি করা হয়নি। গতকাল বুধবার সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি আলোচিত এই তিনটি সাইট সম্পর্কে ইরানকে তার সমস্ত আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা আইএইএর সেই অনুসন্ধানগুলোতে যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন। কারণ তারা চান, ২০১৫ সালের সেই পরমাণু চুক্তি আবারো কার্যকরী হোক।

ইরানের একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ কেন্দ্র, ফাইল ছবি

ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, এ তিনটি সাইট সম্পর্কে এখন যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো আসলে রাজনৈতিক চাপের ফল। ইসরায়েলসহ যেসব দেশ ইরানকে ২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিতে ফিরতে দিতে চায় না, তাদের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই আইএইএর পক্ষ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

একটি পৃথক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে আইএইএ জানায়, ইরান ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে, তার মজুদ এখন চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার ১৯ গুণেরও বেশি। গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত ইরানের মজুদ আনুমানিক তিন হাজার ৯৪০ কেজিতে দাঁড়িয়েছে, যা আগের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে ১৩১ দশমিক ছয় কেজি বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ৬০ শতাংশ এবং তা রয়েছে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইডের আকারে, যে গ্যাস সেন্টিওফিউজকে সমৃদ্ধ করে। এর পরিমাণ ৫৫ দশমিক ছয় কেজি বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে ১২ দশমিক পাঁচ কেজি বেশি।

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ তারিক রউফ বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইরান এই পরিমাণ ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে একটি দরকষাকষির চিপ হিসেবে। তারা এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি চায়।

রউফ বলেন, অসম্প্রসারণ চুক্তির অধীনে ইরানের জন্য ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা বেআইনি নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এই কার্যক্রম আইএইএকে রিপোর্ট করে এবং উপাদানগুলো পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে বাবহার করা হয় । এখন পর্যন্ত ইরান অবশ্য জেসিপিওএ ছাড়া অন্য কোনো চুক্তি লঙ্ঘন করেনি। আর জেসিপিওএ চুক্তি থেকে উভয় পক্ষই বেশ কয়েক বছর আগে বের হয়ে গেছে।

২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনের প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল তেহরানকে চুক্তির পারমাণবিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করতে প্ররোচিত করেছে।