জার্মান এমপি: পুতিন আমাদের দেখে হেসেই খুন

জার্মান এমপি যাহরা বাগেননেখট বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনৈতিক অবরোধ রাশিয়ার ক্ষতি করতে পারেনি। এশিয়াতে তারা দ্বিগুণ পরিমাণ তেল গ্যাস বিক্রি করছে। ইউরোপে জ্বালানি বিক্রির দরকার নেই রাশিয়ার। বরং আমাদের শিল্প-কারখানা বাঁচাতে সস্তায় জ্বালানি দরকার। আমরা রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করে নিজেদের অর্থনীতি ধ্বংস করেছি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিশ্চয়ই আমাদের কাণ্ড দেখে হাসছে।

চলতি সপ্তাহে কাসেল শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাহরা বাগেননেখট (বাঁয়ে)

জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে বামপন্থী ব্লকের সাবেক নেতা যাহরা বাগেননেখট। জার্মান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন।

যাহরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অবরোধ আরোপের পর রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম রেকর্ড মুনাফা করেছে। ওই অর্থ দিয়ে তারা চীনে গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন পাইপলাইন নির্মাণ করছে। এদিকে জ্বালানির অভাবে আমাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্যাস বিদ্যুতের চড়া দামে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। খাবার থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকটে অতিষ্ট মানুষ পথে নেমেছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যদি গ্রিন পার্টি বলত, ক্ষমতায় এলে তারা পুতিনকে শাস্তি দিতে জার্মান অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলবে, তাহলে তারা সরকার গঠনের সুযোগই পেত না। এই অবরোধ রাশিয়াকে নয়, আমাদেরকে ধ্বংস করছে। পুতিন নিশ্চয়ই আমাদের দেখে হেসেই খুন। তৃতীয় আরেকটি পক্ষও হাসছে। এটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি বিক্রির সুযোগ পেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আমেরিকার ফ্র্যাকিং ইন্ডাস্ট্রি। একেকটি ট্যাঙ্কার থেকে তারা ২০ কোটি ডলার আয় করছে।

‘তাহলে কি আমরা গ্যাসের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করব, যারা অন্য একটি রাষ্ট্র আক্রমণ করেছে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির এ প্রভাবশালী এমপি বলেন, আমরা কি সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করছি না? তারাও তো অন্য দেশে বোমা ফেলে মানুষ মারছে। একবারও তো তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়নি।

তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর কথা বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যুদ্ধ তো থামছে না। উল্টো রাশিয়ার আয় বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুদ্ধ থামবে না। যুদ্ধ থামাতে আলোচনা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন প্রথম থেকে আলোচনার কথা বলেছি তখন অন্যরা বলেছে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ হবে না। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঠিকই আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি করলেন। এখন ইউরোপের ও জার্মান সরকারের উচিত যুদ্ধ থামাতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া। নাকি এজন্যও আমরা তুর্কি প্রেসিডেন্টের পথ চেয়ে বসে থাকব?

রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রিমিয়া ফেরত না পেলে আলোচনায় বসবেন না, এ মর্মে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যাহরা বাগেননেখট বলেন, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখল অবৈধ। কিন্তু এটাই পৃথিবীতে একমাত্র অবৈধ দখল নয়। সিরিয়া ও ইরাকের জায়গা দখলে রেখেছে তুরস্ক। সিরিয়ার তেলক্ষেত্র দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একপেশে কথা বললে হবে না। শান্তি চাইলে সমঝোতার ইচ্ছা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ক্রিমিয়ায় কয়েক দশক ধরে রাশিয়ার নৌবহর রয়েছে। রাশিয়াকে সেখান থেকে বলপূর্বক তাড়ানোর কথা ভাবলে এই ভয়াবহ যুদ্ধ অনন্তকাল চলবে। আমরা কি এই অবাস্তব যুদ্ধের জন্য লাখ লাখ প্রাণ বিসর্জন দেব? যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউরোপের কোনো লাভ নেই। বিষয়টি ইউক্রেন প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে। তাদের আলোচনায় বসা দরকার।