চীন-রাশিয়ার হস্তক্ষেপেই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা!

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন সারা বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করে থাকে। কিন্তু চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষেত্রে সংস্থাটি এখন পঙ্গু বলা যায়। কারণ দেশ দুটির পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমশিন বাধার সম্মুখীন হলেও করার কিছুই থাকছে না। এই অবস্থায় মানবাধিকার হাইকমিশনের নতুন প্রধান, ব্যাচেলেটের নবনিযুক্ত উত্তরসূরি অস্ট্রিয়ার ভলকার তুর্ক বলেছেন, চীন-রাশিয়া যদি কথা না শোনে, তাহলে মনে করতে হবে আমরা ‌'অন্য বিশ্ব ব্যবস্থায়' আছি। খবর এএফপি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ

খবরে বলা হচ্ছে, জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনের নিপীড়নের তদন্ত করেছে সংস্থাটি। কিন্তু চীন তা মানতে নারাজ। উল্টো জাতিসংঘের সংস্থাটি থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সংস্থাটিকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।

মানবাধিকার হাইকমিশনের নতুন প্রধান বলেন, সংস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যদি চীনের বিরুদ্ধে ব্যাচেলেটের দেওয়া প্রতিবেদনে সমর্থন দেয়, তাহলে অবশ্যই বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা যদি আমরা করতে ব্যর্থ হই তাহলে মনে করব, আমরা নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

গত ৩১ আগস্ট চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং রিপোর্ট প্রকাশ করে হাইকমিশন। প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমিদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নসহ নানা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। দশ লাখেরও বেশি উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিমকে আটক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

তবে বেইজিং কঠোরভাবে এই ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘকে 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের ঠগ এবং সহযোগী' বলে আখ্যায়িত করেছে দেশটি। এ কারণে মানবাধিকারের সর্বজনীনতার দৃষ্টিভঙ্গি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মিশেল ব্যাচেলেট গত সপ্তাহে জিনজিয়াং রিপোর্ট প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধের বিষয়ে সতর্ক করার পরে চীন তীব্র তদন্তের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন ফিশার বলেছেন, এ ব্যাপারে চীন সরকারের উচিত একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা। এনিয়ে কোনো সময় নষ্ট করা উচিত নয়। একজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, চীনের বিরুদ্ধে তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার মূল্য ভয়াবহ হতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, চীন পর্দার আড়ালে আগে থেকেই যেকোনো পদক্ষেপের মোকাবেলা করতে জোর লবিং করছে। চীনের রাষ্ট্রদূত চেন জু গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে কোনো তদন্তের ঘোর বিরোধী। কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নেয়, তবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।

রাশিয়ার ক্ষেত্রেও একই সংকটের মুখোমুখি জাতিসংঘের অধিকার সংস্থাটি। চীন-রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংস্থাটি এখন বিশ্বাসযোগ্যতার ঝুঁকিতে রয়েছে। মানবাধিকার কাউন্সিল আগামী সোমবার থেকে জেনেভায় একটি মাসব্যাপী অধিবেশনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিলের কাজ সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করা।