গ্রিসের বিরুদ্ধে তুর্কি নৌযানে গুলি চালানোর অভিযোগ

ইজিয়ান সাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তুরস্কের একটি বেসামরিক নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে গ্রিসের কোস্টগার্ড। খবর পেয়ে তুর্কি কোস্টগার্ডের দুটি বোট ঘটনাস্থলে পৌঁছলে গুলিবর্ষণকারীরা স্থান ত্যাগ করে। তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে অব্যাহত কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।

গ্রিসের প্রতি ইইউর অন্ধ সমর্থন পরিস্থিতি জটিল করছে বলে তুরস্কের অভিযোগ

গতকাল বিকেলে তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বোজকাদা দ্বীপ থেকে ১১ মাইল দূরে ‘আনাতোলিয়ান’ নামের একটি রো রো ফেরিতে গ্রিক কোস্টগার্ডের টহল বোট থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। ফেরির দিকে গ্রিক কোস্টগার্ডের টহল বোটের এগিয়ে আসা ও গুলিবর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন অনেকে।

তুর্কি কোস্টগার্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কমরোর পতাকাবাহী নৌযান আনাতোলিয়ানের ১৮ নাবিকের মধ্যে ছয়জন মিশরীয়, চারজন সোমালীয়, পাঁচজন আজারবাইজানি ও তিনজন তুর্কি নাগরিক। আন্তর্জাতিক জলসীমা পাড়ি দেওয়ার সময় ফেরিটিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। খবর পেয়ে তুর্কি কোস্টগার্ডের দুটি নৌযান ঘটনাস্থলে পাঠানো হলে গ্রিক কোস্টগার্ড সেখান থেকে সরে যায়।

গুলিবর্ষণের ঘটনার একটি ভিডিও তুর্কি কোস্টগার্ড কমান্ডের ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে তুরস্ক ও গ্রিসের জলসীমার একটি মানচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেসামরিক নৌযানে গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আঙ্কারার পক্ষ হতে এথেন্সের কাছে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। এতে গ্রিসের কাছে ঘটনাটির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

তুরস্কের অভিযোগের পর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গ্রিক কোস্টগার্ড বলেছে, লেসবোস দ্বীপের বিপরীতে গ্রিসের জলসীমায় সন্দেহজনকভাবে চলার সময় একটি নৌযানকে লক্ষ্য করে সতর্কতাসূচক গুলি চালানো হয়।

আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, আনাতোলিয়ান ফেরি শনিবার তুর্কি জলসীমার বিপরীতে দার্দানেলিস প্রণালীতে নোঙর করা হয়। ন্যাটো জোটের সদস্য দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সময়ে গুলিবর্ষণের এই ঘটনা ঘটল।

তুরস্ক সম্প্রতি গ্রিসের বিরুদ্ধে ইজিয়ান সাগরের কয়েকটি দ্বীপ অবৈধভাবে দখল এবং সেখানে রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে তুর্কি উড়োজাহাজকে হয়রানির অভিযোগ তুলেছে। ১৯২৩ সালের লুজান চুক্তি ও ১৯৪৭ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ইজিয়ান সাগরের পূর্ব দিকের এইসব দ্বীপ বেসামরিকীকরণের কথা থাকলেও গ্রিস সেখানে অবৈধভাবে সৈন্য ও সমরাস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে তুরস্কের অভিযোগ।

অন্যদিকে গ্রিস গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), ন্যাটো ও জাতিসংঘের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছে, তুর্কি কর্মকর্তাদের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, তার জেরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে।

গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইকোস ডেনডিয়াস ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, তুরস্কের আচরণ এমন পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি করছে যে ধরনের পরিস্থিতি আমাদের মহাদেশের অন্য অংশে দেখা যাচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ফারুক কাইমাকচি গত শুক্রবার আঙ্কারাভিত্তিক পলিটিক্যাল ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রিয়টরা মনে করছে তারা নিজেদের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া তুরস্কের উপর চাপিয়ে দিতে পারবে। তাদের প্রতি ইইউর অন্ধ সমর্থন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। ইইউর উচিত দুই প্রতিবেশি দেশের মধ্যকার ইস্যুতে নাক না গলানো।

এদিকে পৃথক ঘটনায় তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রিসের বিরুদ্ধে তুর্কি জলসীমায় অবৈধ অভিবাসীদের ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, শনিবার তুরস্কের একটি মনুষ্যবিহীন উড়োজাহাজ একদল অনিয়মিত অভিবাসীকে ইনফ্ল্যাটেবল বোটে চড়িয়ে তুর্কি জলসীমায় ঠেলে দেওয়ার ঘটনা শনাক্ত করেছে। বোদরুম দ্বীপের অদূরে গ্রিক কোস্টগার্ড এ ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি তুর্কি কোস্টগার্ডকে জানানোর পর অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়েছে।