রাজা চার্লস: ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বে ভুল ধারণা রয়েছে

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন তার ছেলে চার্লস তৃতীয়। দীর্ঘ সাত দশক সিংহাসনের অধিষ্ঠিত ছিলেন তার মা। এবার নতুন রাজা মনোনীত হওয়ার পর চার্লসের প্রতি বিশ্বের আগ্রহ বেড়েছে। বিশ্ব রাজনীতি, কূটনীতি, ধর্ম সম্পর্কে তার অবস্থান কী- সেটি জানারও চেষ্টা চলছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বের করে এনেছে সেসব প্রশ্নের উত্তর।

কুয়েতের গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শনে চার্লস, ফাইল ছবি

রাজা চার্লস তৃতীয় মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। অবশ্য এটি দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবেই চলে আসছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, পাশ্চাত্য যেভাবে মনে করে চরমপন্থা কেবল মুসলমানদের সাথেই জড়িত, বিষয়টি সেরকম নয় বরং সব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় রাসূলকে (স.) ব্যঙ্গ করে আঁকা কার্টুনেরও বিরোধিতা করেন। বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে চার্লস ইসলাম সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন এবং খোলাখুলিভাবে ইসলাম ধর্মের প্রশংসা করেছেন।

চার্লস বিশ্বাস করেন, দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমে ইসলাম সম্পর্কে প্রচুর ‘ভুল বোঝাবুঝি’ রয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালে অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজে একটি বহুল আলোচিত বক্তৃতার সময় বলেছিলেন, ইসলামের প্রকৃতি সম্পর্কে পশ্চিমে অনেক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। বিষয়টি আমরা উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছি। সে সময় চার্লস সতর্ক করে বলেছিলেন, চরমপন্থাকে ইসলামের একটি পরিচয় হিসাবে দেখা উচিত নয়। বরং খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মেও চরমপন্থা বেশ ভালোভাবে জেঁকে বসে আছে।

তুরস্কে জালালুদ্দিন রুমির মাজার পরিদর্শনে সস্ত্রীক চার্লস, ফাইল ছবি

লেখক রবার্ট জবসন তার বই ‘চার্লস অ্যাট সেভেন্টি: থটস, হোপস অ্যান্ড ড্রিমস’-এ উল্লেখ করেছেন, চার্লস মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন অধ্যয়ন করেছেন এবং বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি এই মহাগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

২০১০ সালে অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজের একটি বক্তৃতায় চার্লস বলেছিলেন, প্রকৃতির প্রাচুর্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো স্বেচ্ছাচারী সীমা নয়, ঈশ্বরের দ্বারা আরোপিত সীমা। কুরআন সম্পর্কে আমার উপলব্ধি সঠিক হলে, মুসলমানদেরকে কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এই সীমা লঙ্ঘন না করে। ইসলাম সর্বদাই এ শিক্ষা দিয়েছে এবং এটিকে উপেক্ষা করার মানে হচ্ছে সৃষ্টির সাথে আমাদের চুক্তিতে ত্রুটি করা।

চার্লস ২০০৫ সালে রাসূলকে (স.) উপহাস করে আঁকা ড্যানিশ কার্টুন প্রকাশের সমালোচনা করেছিলেন। ২০০৬ সালে মিশরের কায়রোতে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সফরের সময় তিনি এর নিন্দা জানিয়ে সবাইকে অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অন্যদের কাছে যা মূল্যবান ও পবিত্র, তার সম্মানের ব্যর্থতা বড় বিপদ তৈরি করে।

গত এপ্রিল মাসে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে চার্লস সবাইকে ‘রমজানের চেতনা’ থেকে শেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মুসলমানদের হৃদয়ের উদারতা এবং সদয় হৃদয়ের আতিথেয়তা আমাকে বিস্মিত করে না। আমি নিশ্চিত আমরা যখন আরও অনিশ্চিত সময়ে প্রবেশ করব, মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান মাসে দেওয়া অর্থ তখন বিশাল দাতব্যের উৎস হবে।