আধুনিক দাসত্বের শিকলবন্দি বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ

দাসপ্রথার যুগ আর নেই। তবে আজও আধুনিক দাসত্বের শিকার বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বে এখন ৫ কোটির বেশি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকলে বন্দি। বিশেষ করে দেশে দেশে নারী ও শিশু বেশি বন্দি এই শৃঙ্খলে। এদের দিয়ে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে জোরজবরদস্তি কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে কিংবা দেওয়া হয়েছে জোরপূর্বক বিয়ে।

আধুনিক দাসত্বের শিকলবন্দি বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ

বিশ্বে আধুনিক দাসত্বের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের শ্রমবিষয়ক সংস্থা আইএলও, অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং অস্ট্রেলিয়ার দাতব্য সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ গবেষণাটি চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাধ্যতামূলক শ্রম ও জোরপূর্বক বিয়ের শিকার মানুষের সংখ্যা এক কোটি বেড়েছে।

জাতিসংঘের শ্রমবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের ২ কোটি ৮০ লাখ লোক বাধ্যতামূলক শ্রম দিচ্ছেন। অন্যদিকে জোরপূর্বক বিয়ের পর সংসার করছেন ২ কোটি ২২ লাখ নারী। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৫ কোটি মানুষ এই আধুনিক দাসত্বের শিকার। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রতি দেড়শ মানুষের মধ্যে একজন এমন পরিস্থিতির শিকার।

গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারী ও শিশুরা। বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার প্রতি পাঁচজনের একজনই শিশু। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার অর্ধেক শিশু।

আইএলও জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘ। তবে নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে লক্ষ্য অর্জনের পথে কোনো অগ্রগতি তো নেই, উল্টো পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে আরও বেশি।

গবেষণায় উঠে এসেছে, আধুনিক দাসত্ব সঙ্কট বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে কোভিড-১৯ মহামারি, সশস্ত্র সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। করোনার মহামারিতে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, তাদের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধের কারণে চাকরির বাজার কমেছে এবং হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এতে নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে দেশান্তর। যার ফলশ্রুতিতে বাধ্যতামূলক বিনামূল্যের শ্রমের পাল্লায় পড়েছে মানুষ।

আইএলও প্রধান গাই রাইডার এক বিবৃতিতে বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আধুনিক দাসত্ব পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না বরং দিনে দিনে উল্টো তা বাড়ছে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার  লঙ্ঘিত হচ্ছে। কোনো যুক্তি দিয়েই এমন পরিস্থিতিকে বৈধতা দেওয়া যায় না।