চীনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেই যুক্তরাষ্ট্রের!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার সিবিএস টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীনের আক্রমণ থেকে তাইওয়ানকে বাঁচাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে মন্তব্য করেছেন জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক হ্যাল ব্র্যান্ডস। যুক্তরাষ্ট্র-চীন যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার গেম, দুই দেশের অর্থনীতি ও শিল্প খাতের সক্ষমতা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তিনগুন নৌযান নির্মাণের সক্ষমতা রাখে চীন
সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ক বলেছেন, বোকারা নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয় আর জ্ঞানীরা শেখেন অন্যের অভিজ্ঞতা দেখে। নিজে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে কঠিন শিক্ষা পাবার চেয়ে অন্যের যুদ্ধ দেখে শিক্ষামূলক দিকগুলো চিনে নেওয়া শ্রেয়। ইউক্রেনের অভিজ্ঞতা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে তাইওয়ানকে রক্ষা করা কত ব্যয়বহুল ও কঠিন হবে।
তাইওয়ানকে রক্ষা মানে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো। সে প্রস্তুতি কি যুক্তরাষ্ট্রের আছে? সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার গেমে দেখা গেছে, অনুকূল পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্র জিততে পারবে যদিও সেজন্য বিপুল সংখ্যক লোকবল ও অস্ত্র হারাতে হবে। আর প্রতিকূল পরিবেশে সবকটি ওয়ার গেমের ফলাফল হচ্ছে, চীন জিতবে।
মনে রাখা জরুরি যে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন যুদ্ধ হবে দুটি বৃহৎ শক্তির যুদ্ধ। দুই পক্ষের প্রবাদতুল্য পরিমাণ মিসাইল, গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র ক্ষয় হবে। ধ্বংস হবে বিপুল সংখ্যক জঙ্গিবিমান, ট্যাংক ও যুদ্ধজাহাজ, যেগুলোর শূন্যতা পূরণ করা কষ্টসাধ্য। চীন তাইওয়ানকে অবরোধ করে রাখলে সে অবরোধ ভাঙতে মার্কিন বাহিনীকে মিসাইল, টর্পেডো, লক্ষ্যনিবিষ্ট বোমার ঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জঙ্গিবিমান ও যুদ্ধজাহাজের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, সেটা মার্কিন বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেখেনি।
সাম্প্রতিক এক ওয়ার গেমে দেখা যায়, পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো হলে যুদ্ধের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র দুটি বিমানবাহী রণতরী ও ৭০০-৯০০ জঙ্গিবিমান হারাবে। যুদ্ধ চলতে থাকলে ক্ষতি বাড়তে থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে কোনো পক্ষ হার স্বীকার করতে চাইবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে মনে করছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে নিজেদের যুদ্ধমুখী অর্থনীতির জোরেই যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যেটা ভুলে যাই, তা হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের অন্তত পাঁচ বছর আগে মিউনিখ সংকটের পরপর যুক্তরাষ্ট্র নিজের অর্থনীতিকে যুদ্ধকালীন মোডে নিয়ে গিয়েছিল। ত্রিশের দশকের মহামন্দা কাটিয়ে উঠতে কর্মসংস্থান ও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি জরুরি ছিল। সেজন্য প্রেসিডেন্ট ফ্রেডেরিক ডিলানো রুজভেল্ট অর্থনীতি ও শিল্প খাতকে যুদ্ধকালীন মোডে নিয়ে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এখন চীনের সঙ্গে যুদ্ধ হলে আমরা কি একই রকম রণযাত্রায় শিল্পোৎপাদন চালাতে পারবো? শিল্প-কারখানার উৎপাদনকে বেসামরিক থেকে সামরিক মোডে নেওয়ার, যেমন- ট্রাকের পরিবর্তে ট্যাংক, প্রশাধনী ও সারের পরিবর্তে বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। তারপরও কাঁচামাল সংকট, জনবল প্রশিক্ষণ, সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা কাটিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সচল করতে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল।
শিল্পের অগ্রসরতার বিচারে যুক্তরাষ্ট্র তখন অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিল, অর্থনৈতিক সক্ষমতার অনেকটুকু অব্যবহৃত ছিল। এটা সত্য যে মার্কিন বাহিনী বিশ্বের সেরা সামরিক শক্তি। তারপরও পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। চীন নিজেই এখন সারাবিশ্বের ওয়ার্কশপে পরিণত হয়েছে। নৌযান নির্মাণে তারা আমাদের তিনগুণ সক্ষমতা রাখে। যুদ্ধের শুরুতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়া দুটি পক্ষের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেবে এ উৎপাদন-সক্ষমতা।
যুক্তরাষ্ট্রের মেশিন টুলস ও প্রশিক্ষিত জনবলের ঘাটতি আছে। যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যনিবিষ্ট ও দূরপাল্লার মিসাইল, বোমার ঘাটতি মোকাবেলায় আমাদেরকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। চীনের এসব অস্ত্রের মজুত বিশাল, উৎপাদন-সক্ষমতা অফুরন্ত। পৃথিবীর হেন কোনো অস্ত্র নেই যা তারা তৈরি করছে না।
অর্থনীতিবিদ নোয়াহ স্মিথ যথার্থই বলেছেন, চীন ও রাশিয়া এক নয়। ইউরোপে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাশিয়াকে রসদ নিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যদিকে চীন একাই গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিরুদ্ধে যে কোনো বৈশ্বিক যুদ্ধে নিজের ও রাশিয়ার প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য রাখে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.