অপহরণ মামলা-লাশ শনাক্ত; অতঃপর জীবিত উদ্ধার খুলনার রহিমা বেগম

প্রথমে নিখোঁজ, তারপর অপহরণের অভিযোগ এবং একপর্যায়ে লাশ উদ্ধার হওয়ার মতো নাটকীয় ঘটনার পর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন খুলনার রহিমা বেগম। ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে তাকে শনিবার রাতে উদ্ধার হওয়ার পর জানা গেছে, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই প্রায় এক মাস ধরে আত্মগোপনে ছিলেন এই নারী। রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর অপহরণের অভিযোগে পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন ও মামলা দায়ের এবং ময়মনসিংহে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশকে তার মরদেহ বলে শনাক্তের ঘটনায় বিষয়টি আলোচিত ছিল দেশজুড়ে।

ফরিদপুরে উদ্ধারের পর খুলনার দৌলতপুর থানায় আনা হয় রহিমা বেগমকে

খুলনার দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আত্মগোপনে ছিলেন রহিমা বেগম। ওই গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে শনিবার রাত ১১টার দিকে রহিমাকে আটক করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাতেই তাকে দৌলতপুর থানায় নিয়ে আসা হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি,  রহিমা বেগম ফরিদপুরে একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি কোনো ফোন ব্যবহার না করায় ট্র্যাক করা যাচ্ছিল না। পরে আরও খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হই আমরা। তিনি জানান, দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাত ১১টার দিকে ফরিদপুরের ওই বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান, ওই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে গল্প করছেন রহিমা বেগম।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম তাৎক্ষণিক কোনো জবাব না দেওয়ায় তাকে রাতেই দৌলতপুরে নিয়ে আসা হয়।

রহিমা আসলেই অপহৃত হয়েছিলেন, নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, রহিমার পরিবারের করা অপহরণ মামলার তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে রয়েছে। এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত উদঘাটন করে জানাবে পিবিআই।

গত ২৭ আগস্ট খুলনা নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। তাকে অপহরণ করা হয়েছে- অভিযোগে পরদিন থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার। আর এ নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় স্ট্যাটাস দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন তার আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় এলাকায় উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশ তার মা রহিমার বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মরিয়ম মান্নান। ফুলপুর থানায় গিয়ে নিহতের বস্তাবন্দি বিভিন্ন আলামত ও পায়জামা দেখে ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন তিনি। লাশের ডিএনএ পরীক্ষারও আবেদন করেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী মরিয়ম।

মরিয়ম মান্নান তখন বলেন, এটাই আমার মা। পায়জামাটা আমার মায়ের। মাকে চিনতে কিছুর প্রয়োজন হয় না। আমার মায়ের উপর আগে যারা হামলা করেছিল, তারাই হত্যা করেছে।

এদিকে তার মাকে উদ্ধারের খবরে শনিবার রাতে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমার মাকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি। এই মুহূর্তে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ নেই। এই মুহূর্তে মাকে দেখেতে খুলনা যাচ্ছি আমি।’

এদিকে দৌলতপুর থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই রহিমা বেগম ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে ধারণা হচ্ছে, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন রহিমা বেগম।’