সাত বছর পর খুলল ভেনেজুয়েলা-কলম্বিয়া সীমান্ত

সাত বছর পর নিজেদের মধ্যকার সীমান্ত খুলল আমেরিকার দুই দেশ ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া। উভয় দেশের দীর্ঘতম এ সীমান্তে বৈধভাবে পারাপারের সুযোগ উম্মুক্ত হওয়ায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পারাপার উদ্বোধন করেন। খবর রয়টার্স, আল জাজিরা।

সীমান্ত খুলে দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, পেছনে দুই দেশের কর্মকর্তারা

গত জুনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে গুস্তাভো পেত্রোর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সীমান্ত পুণরায় খুলে দেওয়া। এতে করে দুই পাড়ের মানুষের অবাধ যোগাযোগের পথ উন্মোচনের পাশাপাশি ভেনেজুয়েলা থেকে তেল, কয়লা, ফলমূল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আমদানি সহজ হবে। একইভাবে. মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ভেনেজুয়েলা সরকারও প্রতিবেশী দেশ থেকে ওষুধ সামগ্রী, অ্যালুমিনিয়াম, টয়লেট পেপার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারবে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো গতকাল সীমান্তে অবস্থিত সাইমন বলিভার আন্তর্জাতিক সেতুতে পৌঁছেন। পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দিয়ে ভেনেজুয়েলায় পৌঁছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের সীমান্ত পারাপার পুনরায় চালু করেন। কারাকাসে নিযুক্ত কলম্বিয়ান রাষ্ট্রদূত আরমান্দো বেনেদেত্তি, বোগোতায় নিযুক্ত ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রদূত ফেলিক্স প্লাসেনসিয়া, ভেনিজুয়েলার পরিবহনমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি চাই সীমান্ত পারাপারের প্রথম ও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হোক এখানকার স্থানীয় মানুষ, যারা স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও অন্যান্য প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিত। যারা বিভিন্ন অপরাধী চক্রের হাতে নিহত ও ধর্ষিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পার হতে বাধ্য হতো।

সাত বছর পর সীমান্ত পারাপারের সুযোগ নিতে গতকাল সাইমন বলিভার সেতুর দুই পাশে অপেক্ষমান ছিল পণ্যবাহী কয়েক ডজন ট্রাক। কলম্বিয়ান কাকুতো শহর ও ভেনেজুয়েলার তাচিরা প্রদেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সুযোগ দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের সমৃদ্ধির বার্তাবাহক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার কর্মকর্তারা।

২০০৮ সালে ভেনেজুয়েলা-কলম্বিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। সে বছর কলম্বিয়া সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করলে প্রতিবাদে বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেন ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ।

ভেনিজুয়েলার যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজনীতিকদের দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তে অবস্থানের সুযোগ দেওয়ায় ২০১৯ সালে কলম্বিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে নিকোলাস মাদুরো সরকার। তার আগে ২০১৫ সালে দুই দেশের সীমান্তে নিজেদের তিন সৈন্য হত্যার ঘটনায় সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় ভেনেজুয়েলা সরকার।

আমেরিকা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিনপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছে কলম্বিয়া। আশেপাশের অন্যান্য দেশে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষের সরকার ক্ষমতায় এলেও কলম্বিয়ার ডানপন্থী সরকারগুলো বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনা করেছে। দীর্ঘদিন পর এ ধারায় ছেদ টানতে চলেছেন কলম্বিয়ায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসা বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তার নির্বাচনের পরপর ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসে।

গতকাল সীমান্ত পারাপার উদ্বোধনের পর এক টুইটে পেত্রো লেখেছেন, ‘আমরা কথা রেখেছি। সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা ও সমগ্র আমেরিকার জন্য সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দিক, এই কামনা করি।’

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো টুইট করেছেন, ‘ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের এই বিরাট পদক্ষেপ নেওয়ায় ভেনেজুয়েলার তিন কোটি নারী-পুরুষের পক্ষ থেকে আমি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’