৪ অঞ্চলের ঠিকানা বদলে রাশিয়া-ইউক্রেনের লাভ-ক্ষতি

ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের সাথে যুক্ত করে নিয়েছে রাশিয়া। এর আগে একইভাবে যুক্ত করে নিয়েছিল ক্রিমিয়াকে। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন চারটি অঞ্চল যুক্ত করে আসলে রাশিয়া কতটুকু লাভবান হলো বা চারটি অঞ্চল হারিয়ে ইউক্রেনের কতটুকু ক্ষতি হলো। উত্তর আসছে, কেবল সম্পদ নয়, জনবলেও এ চারটি অঞ্চল থেকে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রাশিয়ার। খবর আনাদোলু।

রাশিয়ার সাথে সংযুক্তিকরণ অনুষ্ঠানে ৪ অঞ্চলের প্রধানেরা

ইউক্রেনের গত ফেব্রুয়ারিতে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। কিছুদিনের মধ্যেই এ অভিযান শেষ হয়ে যাবে প্রথমদিকে এমনটি মনে করা হলেও দীর্ঘ সাত মাসে এর পরিসমাপ্তি হয়নি। বরং কিছুদিন আগে ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় পিছু হটেছে রুশ বাহিনী। এরইমধ্যে গত সপ্তাহে রুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪টি অঞ্চলে গণভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অঞ্চলগুলো হলো দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া। পাঁচ দিনব্যাপী গণভোটে রাশিয়ার পক্ষেই ফল আসে। ফলে সে অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্তকরণের ঘোষণা দেন পুতিন।

উল্লেখিত চারটি অঞ্চলের পরিমাণ আনুমানিক ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা ইউক্রেনের মোট এলাকার প্রায় ১৫ ভাগ। এ চারটি অঞ্চলই বিভিন্ন দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ। ফলে এ অংশটুকু রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ায় রাশিয়ার শক্তি যেমন আগের তুলনায় বাড়বে, ঠিক তেমনিভাবে ঘাটতির মুখে পড়বে ইউক্রেন। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার এ পদক্ষেপের নিন্দা করলেও তাদেরকে এ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া ওই অঞ্চল উদ্ধারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

আলোচিত চার অঞ্চল

২০১৪ সাল পর্যন্ত, দোনেৎস্ক অঞ্চলটি ইউক্রেনের মূল শিল্প কেন্দ্র ছিল। শিল্প উৎপাদনের মোট ২০ শতাংশ আসত এই অঞ্চল থেকে। এছাড়া এ অঞ্চলটি খণিজ সম্পদে পরিপূর্ণ একটি এলাকা, যেখানে ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম কয়লা ক্ষেত্রের অবস্থান।

অন্যদিকে লুহানস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এবং ধাতুশিল্প, যন্ত্রপাতি এবং কৃষি শিল্পের জন্য সুপরিচিত। এখানে বেশকিছু বৃহৎ শিল্পকারখানা, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্ল্যান্ট ও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কয়লা খনি রয়েছে।

জাপোরিঝিয়া অঞ্চলটি ইউক্রেনের একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি সরবরাহ কেন্দ্র এবং দেশটির মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ এখানেই উৎপাদিত হয়। ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত জাপোরিঝিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক সুবিধা, ডিনিপার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বোতিয়েভো বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এ অঞ্চলে আরও বেশকিছু বড় শিল্প কারখানা, যান্ত্রিক প্রকৌশল সুবিধা বিদ্যমান।

খেরসন জাহাজ নির্মাণের জন্য বিশেষায়িত একটি অঞ্চল। এছাড়া রিসোর্ট ও কৃষির জন্যও এর বেশ খ্যাতি রয়েছে। সেই সাথে এ অঞ্চল দখলের রাখার মাধ্যমে পুরো আজভ সাগরও রাশিয়ার অংশ হয়ে যাবে।

সম্পদের এই সুবিধার পাশাপাশি রাশিয়া এ চারটি অঞ্চল দ্বারা জনবলের দিক দিয়েও লাভবান হতে পারে। জনসংখ্যা হ্রাসের ঝুঁকিতে থাকা রাশিয়া এই চারটি অঞ্চলে নিজের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে প্রায় ৯০ লাখ লোককে নিজের জনসংখ্যায় যুক্ত করতে পারবে।