ওরা কেন হিজাব পরতে পারবে না, প্রশ্ন শিখ নারীর

আমি যদি শিখ ধর্মানুসারী হিসেবে দস্তার বা পাগড়ি পরতে পারি তাহলে মুসলিম মেয়েরা কেন হিজাব পরতে পারবে না, প্রশ্ন করেন চরনজিত কাউর। ভারতের সুপ্রিম কোর্টকেও তিনি একই প্রশ্ন করেছেন। কর্নাটক রাজ্যে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে পিটিশন রুজু করেছেন ২৩ জন আবেদনকারী। এরমধ্যে একমাত্র অমুসলিম পিটিশনার চরনজিত কাউর। হিজাব নিয়ে কেন পিটিশন করলেন, এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি সংবাদমাধ্যমকে। খবর দ্য কুইন্ট।

ওরা কেন হিজাব পরতে পারবে না, প্রশ্ন শিখ নারীর

৪৬ বছর বয়সী চরনজিত একাধারে একজন কৃষাণী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং কলেজ পড়ুয়া ছেলের মা। কৃষিকাজের পাশাপাশি নিত্যদিন তাকে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে ছুটতে হয় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। পাশাপাশি সংসার সামলানো, ছেলে ও স্বামীর দেখভাল। এত কাজের মধ্যে কেন আদালতে ছুটোছুটি শুরু করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে বুঝতে হবে তা আমার ঘরেও আসতে পারে। আজকে হিজাবের বিরুদ্ধে যা শুরু হয়েছে, একদিন তারা শিখ পাগড়ির বিরুদ্ধেও এভাবে খড়গহস্ত হতে পারে।

কর্নাটকে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে ২৩টি পিটিশন রুজু হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে

চরনজিত বলেন, আমার মতো সব নারীরই বুঝা উচিত যে মুসলিম মেয়েদের ওপর এমন নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা আরোপ হলে একদিন আমাদের বিরুদ্ধেও এমন আইন হতে পারে। একজন শিখ ধর্মানুসারী হিসেবে কেউ আমাকে দস্তার পরতে বাধ্য করেনি। এটা আমার নিজের পছন্দ। আমি জানি আমার কাছে দস্তারের গুরুত্ব কত অপরিসীম। মুসলিম মেয়েরাও হিজাবকে একই সমান গুরুত্ব দেয়। আমার যদি বাধা না থাকে, ওদের আপনি বাধা দেবেন কেন?

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে হিজাব সংক্রান্ত পিটিশনগুলোর শুনানি গত ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। এর আগে ১০ দিন টানা সওয়াল জবাব হয়েছে বিভিন্ন পিটিশনের ওপর। হিজাবে নিষেধাজ্ঞা মুসলিম শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বরখেলাপ বলেছেন কোনো পিটিশনার, কেউ বলেছেন এ নিষেধাজ্ঞা মেয়েদের শিক্ষার অধিকার খর্ব করছে, কারও মতে এটা ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।

হরিয়ানার কাইঠালের অধিবাসী চরনজিত বলেছেন, হিজাব যার যার ব্যক্তিগত পছন্দ ও বিবেচনার বিষয়। হিজাবকে উপলক্ষ করে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা ও ক্লাসে যোগদানে বাধাদান বেআইনি। ঘোমটা দেওয়া ও মাথা ঢেকে রাখা ভারতীয় নারীদের হাজার বছরের ঐতিহ্য দাবি করে তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাতিলের মতো বহু হিন্দু নারী শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে রাখেন। অনেকে মাথা না ঢাকলেও সিঁথিতে সিঁদুর দেন। কই, হিন্দু বোনদের সিঁদুর নিয়ে তো আমরা প্রশ্ন তুলিনি। আমরা বলিনি কেন মাথায় এটা দিয়েছেন, আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে, মুছে ফেলুন। তাহলে হিজাব পরলে প্রশ্ন করবেন কেন?

হিজাব নিয়ে পিটিশনের প্রেরণা পেলেন কোথায়, প্রশ্ন করলে চরনজিত বলেন, ইন্টারনেটে হঠাৎ একদিন ভিডিও দেখলাম একটি মেয়ে স্কুলের সামনে স্কুটি রেখে এগোচ্ছে আর একদল ছেলে তার চারপাশ ঘিরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছে। একপর্যায়ে মেয়েটি জোরে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিয়ে ওঠে। পরে জেনেছি ওই মেয়ের নাম মুসকান।

মুসকান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে বলেছে স্লোগান না দিয়ে মুসকানের উচিত ছিল চুপ করে ক্লাসে ঢুকে পড়া। আমি মনে করি সে ঠিকই করেছে। আমরা বিরূপ পরিস্থিতিতে পরলে ‘বোলে সো নিহাল, সাত শ্রী আাকাল’ উচ্চারণ করি। আমরা এতে সাহস ও শক্তি বোধ করি। মুসকানও তা-ই করেছে। একা এতগুলো ছেলের মুখোমুখি হতে গিয়ে সে আল্লাহু আকবর বলেছে। এই স্লোগান দরকার ছিল।